উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: লাগাতার বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা। বিভিন্ন শহরের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হয়েছে। পাশাপাশি টানা বর্ষণের জেরে সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ ধসে যায়। ফলে সাময়িকভাবে ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। পরে বেলার দিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে আংশিকভাবে যান চলাচল শুরু হয়।
অন্যদিকে, ভারি বর্ষণে জলমগ্ন গঙ্গারামপুর শহর। কার্যত গৃহবন্দি পড়েছেন শহরের হাজার হাজার মানুষ। পুরসভার তরফে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ জায়গায়। ইতিমধ্যে প্রায় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্টেডিয়ামে। টানা বৃষ্টির জেরে শহরের দোকানপাট বন্ধ। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ও বাজার বন্ধ থাকায় চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন শহরবাসী। ভারী বর্ষণের ফলে গঙ্গারামপুরের একাধিক পুজো মণ্ডপ ডুবে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে ভাসতে শুর করেছে মন্ডপ সাজিয়ে তোলার সামগ্রী। গঙ্গারামপুর পুরসভার পুর প্রধান প্রশান্ত মিত্র বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ওপরে প্রায় হাটু সমান জল। বহু মানুষের বাড়ি ডুবে গিয়েছে। তাঁদের আমরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলেছি। প্রায় ৫০টি পরিবারকে আমরা উদ্ধার করে স্টেডিয়ামে আশ্রয় করে দিয়েছি। খাবারের ব্যবস্থাও পুরসভা থেকে করা হয়েছে। বৃষ্টির জল যাতে নর্দমা দিয়ে বের করা যায়। তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।‘
পাশাপাশি বৃষ্টিতে জলমগ্ন মালদা শহর। শনিবার রাতে ঘণ্টা তিনেকের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে মালদা। এদিকে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জমা জলের মধ্যে দিয়েই রোগীদের মেডিকেলে নিয়ে আসা এবং জলমগ্ন ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখা যায়।
একটানা ভারী বৃষ্টির ফলে জলমগ্ন রায়গঞ্জ শহর। রাস্তার ওপর দিয়ে বইছে জল। বাড়িতে জল ঢুকে পড়ায় অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে আশ্রয় নিয়েছে। রায়গঞ্জ শহরের এই অবস্থার জন্য রায়গঞ্জ পৌরসভার ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, ভোটের আগে মাস্টার প্ল্যানের কথা বললেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকরী না হওয়ায় সারা বছর ভুগতে হচ্ছে শহরবাসীকে। স্থানীয় ব্যবসায়ী শ্যাম রায় বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুব খারাপ। একটু বৃষ্টি হলেই এখানে জল জমে যায়। ড্রেনগুলো ছোট হওয়ায় খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়।‘
এবিষয়ে রায়গঞ্জের পুর প্রশাসক সন্দীপ বিশ্বাস জানান, এত পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে যার জেরে শহরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই জল জমেছে। বিশেষ করে নীচু এলাকাগুলি জলমগ্ন। প্রয়োজন অনুযায়ী পাম্প সেট বসিয়ে জল বের করা চেষ্টা করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে নিম্নচাপের ফলে সারা উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুরেও শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির জেরে ধুমসাডাঙ্গি গ্রামের ১০টি মুসহর সম্প্রদায়ের পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়ির উঠোনে প্রায় হাঁটু সমান জল জমে রয়েছে। এমনকি বাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে জল। বাচ্চা-বৃদ্ধ নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন পরিবারগুলি। পরিবারগুলিতে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। শুকনো ভাত ও খিচুড়ি খেয়ে কোনরকমে দিন গুজরান করছে পরিবারগুলি।
একটানা বৃষ্টির জেরে কার্যত বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গাজোল ব্লকে। বৃষ্টির জলে ডুবে গিয়েছে তিনটি জাতীয় সড়ক। গাজোল বামনগোলা পূর্ত সড়কের বেশকিছু এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল। প্রায় ৫ ফুট জলের তলায় চলে গিয়েছে সাহাজাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। আদিনার কাছে ঝিকরা এলাকায় ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি লেনে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকালে বেশকিছু জলবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেন গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছেন বিডিও অরুণ কুমার সর্দ্দার।
গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টির জেরে গাজোলের বিভিন্ন এলাকা জলে প্লাবিত হয়েছে। আমরা সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছি। প্রচুর ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের তরফে দুর্গত মানুষদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আমরা ত্রিপল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। জেলা থেকে তিনটি স্পিডবোট পাঠানো হয়েছে। ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির তরফে প্লাবিত এলাকায় উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। সমস্ত এলাকার দিকে নজর রাখছি আমরা।‘