সানি সরকার, শিলিগুড়ি : জলাধার বাঁচাতে যে দলের নেত্রী চারিদিকে কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন সেই দলেরই প্রাক্তন এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে পুকুর ভরাটের অভিযোগ। আরও আছে। এলাকায় সেভাবে জনবসতি না থাকলেও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ) ওই ভরাট পুকুরের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তাও তৈরি করে দিচ্ছে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জোরালো হয়েছে।
বাড়িভাসা মেইন রোডের পাশে থাকা কামারপাড়ায় পুকুর সংলগ্ন জমিগুলিতে তেমন বাড়িঘর না থাকা সত্ত্বেও এসজেডিএ রাস্তা তৈরি করায় নানা প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্লট করে চড়া দামে যাতে জমি বিক্রি সম্ভব হয়, সেই সুবিধা করে দিতেই সরকারি সংস্থাটি রাস্তা তৈরি করছে। এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘আমরা তো নিজে থেকে কোনও প্রকল্প নিই না। রাস্তা তৈরির জন্য নিশ্চয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।’
বিজেপি সদ্য ডাবগ্রাম-২ গ্রাম পঞ্চায়েতটির ক্ষমতা দখল করেছে। যে সময় পুকুর ভরাট হয় এবং তার পাশ দিয়ে পাকা রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে, সেই সময় তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েতটির ক্ষমতায় ছিল। আর এতেই গোটা বিষয়টিতে দলীয় সিন্ডিকেটের প্রভাবের স্পষ্ট বলে বাসিন্দাদের দাবি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডাবগ্রাম-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জমির কালোবাজারি নতুন কোনও ঘটনা নয়। জাল নথি দিয়ে এক জমি একাধিকবার হাতবদলের ঘটনাও ঘটেছে।এনিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত একাধিকবার সরব হয়েছেন।
পঞ্চায়েত সদস্য থাকার সময় প্রভাব খাটিয়েই পারিবারিক প্রায় এক বিঘা জমির ওপর থাকা পুকুরটি জুলি রায় ভরাট করেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। দু’মাস আগে পুকুর ভরাটের কথা স্বীকার করে নিয়ে জুলি বলেন, ‘সামান্য একটি পুকুর ভরাট করতে আইনের অনুমতি লাগবে কেন? পরিবারের সকলেই তো আলাদা বাড়ি করতে চায়।’ যদিও ব্যক্তিগত পুকুরও আইনত ভরাট করা যায় না বলে রাজগঞ্জের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলআরও) শুভব্রত মিত্র জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি কোনও পুকুরই ভরাট করা যায় না। তবে সংশ্লিষ্ট পুকুরটি সম্পর্কে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ যখন পেলাম, নিশ্চয় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তৃণমূল সূত্রে খবর, এমন বিস্তর অভিযোগের জন্যই এবারের পঞ্চায়েত ভোটে জুলিকে টিকিট দেওয়া হয়নি। তাঁর পরিবর্তে জানকী রায়কে টিকিট দেওয়া হয়।
এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য ভোটে বিজেপি প্রার্থী সুপেন রায়ের পক্ষে রায় দেন। পুকুর ভরাট, অনৈতিকভাবে এসজেডিএ’র রাস্তা তৈরি নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার করে সুপেন ভোটে বাজিমাত করেন। বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুপেন বলেন, ‘পুকুর ভরাট নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। যেখানে মানুষের বসবাস নেই, সেখানে কেন রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলাম। কিন্তু ওরা সমস্ত স্তরের ক্ষমতায় থাকায় কিছুই বন্ধ করতে পারিনি।’ স্থানীয় সূত্রে খবর, এসজেডিএ’র বোর্ড সদস্য রঞ্জন শীলশর্মা সেই সময় প্রতিবাদ করেছিলেন। জনবসতিহীন এলাকায় রাস্তা তৈরি নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন অনুসারে প্রকল্প অনুমোদনের কথা বোর্ড মিটিংয়ে বারবার বলি। কিন্তু কোনও কাজ হয় না। ল্যান্ড মাফিয়াদের সুপারিশে হয়তো হচ্ছে। এক বোর্ড সদস্যও এমন কাজে প্রভাব খাটাচ্ছেন। দলের বদনাম হচ্ছে।’