কোচবিহার: ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।’ আবার যে রাঁধে সে টোটো চালিয়ে সংসারের হালও ধরে। কোচবিহার-২ ব্লকের গোপালপুরের বাসিন্দা লিপিকা রায়বর্মনের গল্পটা অন্য আর পাঁচজন মহিলার থেকে আলাদাই। স্বামী মারা গিয়েছেন বহুদিন আগে ছেলে রোহিত বর্মন হরেন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সাড়ে চার বছরের মেয়ে অঙ্কিতাকে পড়শিদের ভরসায় রেখেই রোজ টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন লিপিকাদেবী।
পাঁচ বছর আগের কথা। ছেলে রোহিত অনেকটাই ছোটো। মেয়ে অঙ্কিতা তখন গর্ভে। সেই সময়ই লিপিকাদেবীর স্বামী মারা যান। একমাত্র রোজগেরে মানুষের আকস্মিক মৃত্যুতে সংসারে চরম আর্থিক অনটন নেমে আসে। সেইসময় শোকের ঘোর কাটিয়ে সেলাইয়ের কাজ বেছে নিয়েছিলেন লিপিকাদেবী। করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে সেই পেশার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। সেলাইয়ের কাজকে আকড়ে ধরে সংসার চালাতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে সিদ্ধান্ত নেন টোটো চালাবেন। ৮ মাস আগে ৪০হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো টোটো কেনেন। অধিকাংশ টাকাই অবশ্য ঋণ নিয়েছিলেন। এখনও সেই টাকা পরিশোধ করছেন। রোজ সকালে রান্না সেরে ছেলেকে স্কুলে পাঠান। মেয়ে বাড়িতে একাই থাকে। পড়শিরাই তাকে নজরে রাখেন। এরপর টোটো নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় ফেরেন বাড়িতে।
লিপিকাদেবী বলেন, ‘সেলাইয়ের কাজ করে খুব বেশি রোজগার হয় না। সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলের পড়াশোনার খরচও রয়েছে। তাই টোটো চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার হয়। তা দিয়ে সংসার চলে যায়। সেই টাকার একটি অংশ দিয়ে ঋণ মেটাতে হয়।’
লিপিকাদেবীর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তার টোটোতে চেপে অফিস থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন শ্রাবণী দাস। তিনি বললেন, ‘এর আগে আমি কোনও মহিলাকে টোটো চালাতে দেখিনি। অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়িতে ফেরার জন্য টোটো ধরব বলে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ ওনাকে টোটো চালাতে দেখে অবাক হয়ে যাই। ওনার টোটোতেই বাড়িতে ফিরছি।’