সানি সরকার, শিলিগুড়ি: স্বার্থরক্ষায় এবার উদ্যোগী হলেন ক্ষুদ্র চা চাষিরাই (Tea farmers)। সুরক্ষায় নজর দিয়ে রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতায় জোর দিল ক্ষুদ্র চাষিদের বিভিন্ন সংগঠন। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে (Siliguri) নর্থবেঙ্গল স্মল টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সাতটি সংগঠন বৈঠকে বসে সচেতনতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। ছোট চা বাগানগুলিতে নিয়মিত নজরদারি, রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষতিক্ষারক দিকগুলি তুলে ধরতে লিফলেট বিলি, নিয়মিত সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এদিনের বৈঠকে।
জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলছেন, ‘ক’দিন ধরেই সচেতনতামূলক শিবির হচ্ছে। এবার নিজেদের তাগিদেই সংগঠনগতভাবে শিবিরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সচেতনতা গড়ে তোলা হবে তৃণমূল স্তর থেকে।’
খাদ্য সুরক্ষায় জোর দিয়ে চা গাছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক যাতে ব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে ২০১৫-’১৬ সালে টি বোর্ড কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েকটি রাসায়নিককে নিষিদ্ধ চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু টি বোর্ডের ওই নির্দেশ কিছুদিন আগে কার্যকর করতে শুরু করে বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলি। নিষিদ্ধ রাসায়নিক ছোট চা বাগানগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন তথ্য তুলে ধরে পাতা কেনা বন্ধ করার কথা জানানো হয়। ফলে চরম সংকট দেখা দেয় ক্ষুদ্র চা বাগানে। এমন পরিস্থিতিতে গত ৩ এপ্রিল চালসায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Cm Mamata Banerjee) সঙ্গে দেখা করেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বিধি যেহেতু রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীন, তাই সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য সংগঠনগুলি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অন্তত দুই বছর সময় চেয়ে নেয়। ক্ষুদ্ধ চা চাষিদের আবেদনে সাড়া দেন মুখ্যমন্ত্রী। জলপাইগুড়ির সভায় মমতা বলেন, ‘দুই বছর সময় দেওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি। আশা করছি পরবর্তীতে আর কোনও সমস্যা হবে না। মনে রাখতে হবে ১০ লক্ষ মানুষের রুটিরুজি এর সঙ্গে জড়িত।’
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে এবার আসরে নামল উত্তর দিনাজপুর স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, আইটিপিএ নিউ টি গার্ডেন ফোরাম, চোপড়া স্মল টি প্ল্যান্টার্স সোসাইটির মতো সংগঠনগুলি।
নর্থবেঙ্গল স্মল টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ভজহরি ভৌমিক জানান, প্রাথমিকভাবে প্রতিটি সংগঠন নিজস্ব সদস্য বা জেলায় সচেতনতার কাজ করবে। লোকসভা নির্বাচন পরবর্তীতে প্রতিটি সংগঠনের সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
উত্তরবঙ্গে বটলিফ ফ্যাক্টরি রয়েছে ২৪২টি। ক্ষুদ্র চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তাৎপর্যপূর্ণভাবে মোট চা উৎপাদনের ৬৫ শতাংশই পাওয়া যায় ছোট বাগান থেকে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষুদ্র চা চাষের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। ফলে ছোট বাগানগুলি বড় কর্মসংস্থানের জায়গা হয়ে উঠেছে।