পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: গতবছর সিকিমে (Sikkim) হ্রদ বিপর্যয়ের ফলে তিস্তা (Teesta) নদী অববাহিকায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিভিন্ন রকম পরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তনগুলিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে গবেষণা ও সমীক্ষা করতে মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে (Jalpaiguri) এসে পৌঁছাল রাজ্য সেচ দপ্তরের রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নদী বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিদল। তিস্তার গভীরতা, গতিপথ পরিবর্তন, বালির পুরু স্তরের উচ্চতা, নদী আগে কোনও জায়গায় কী পরিমাণ জলধারণ করত, এখন কী পরিস্থিতি সেগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখবে নদী বিশেষজ্ঞের এই দলটি।
জুন মাসেই বর্ষা শুরু হচ্ছে। অথচ এখনও তিস্তা নদী অববাহিকায় পলি, বালির পুরু স্তর জমে রয়েছে। গত বছর অক্টোবরে সিকিমের প্রাকৃতিক বির্পযয়ের ফলে সমতলের তিস্তা নদীতে এলাকাভিত্তিতে কোথাও দু’ফুট থেকে চার ফুট উচ্চতায় বালিস্তর জমেছে। মালবাজারের কাছে টটহাওতে এবং রাজগঞ্জের চুমুকডাঙ্গিতে তিস্তা নদীবক্ষে পুরু বালির আস্তরণ পড়েছে। ফলে বর্ষার সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা তিস্তার জল এই এলাকায় অগভীরতার জন্য বাধাপ্রাপ্ত হবে।
এছাড়া রাজগঞ্জ, মালবাজার, ক্রান্তি ব্লকের একাধিক জায়গায় তিস্তা নদীবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে তিস্তা তার চরিত্র বদলে কিছুটা অন্য অভিমুখে সরে গিয়েছে। যেমন রাজগঞ্জের লালটং বস্তির কাছে তিস্তা ডানদিকে প্রবাহিত হত। কিন্তু সিকিমের বিপর্যয়ের পর তা বাঁদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
পাশাপাশি সেসময় ক্রান্তির দক্ষিণ চ্যাংমারি এলাকায় তিস্তা নদীবাঁধের তলা দিয়ে জল প্রবাহিত হয়ে নদীর বহু জায়গা স্যান্ড বয়লিং অর্থাৎ উষ্ণ প্রস্রবণের মতো চেহারা নিয়েছিল। তাতে জলের সঙ্গে বাঁধের নীচের বালি, পলি বেরিয়ে আসছিল। জলপাইগুড়ি সেচ বিভাগের থেকে সেই সমস্যা তখন সাময়িক মেটানো গিয়েছিল। সেসময় বাঁধের পুরোদস্তুর ক্ষতি আটকানো সম্ভব হয়েছিল পদস্থ বাস্তুকারের বুদ্ধিমত্তায়।
এদিকে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ থেকে বেরিয়ে আসা জল মিলনপল্লির সমতলের দিকে পুরু চড়া ফেলেছে। এই পরিস্থিতির বিষয়ে সেচ দপ্তর যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সেবকের কাছে নীচু তিস্তা নদী অববাহিকা থেকে জলপাইগুড়ি জেলা হয়ে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ যে পুরু বালির আস্তরণ পড়েছে, তা কীভাবে সরবে। কেন্দ্র কোনও হস্তক্ষেপ করবে কি না সেবিষয়ে সেচ দপ্তর জানে না। কিন্তু বর্ষাকাল সামনে আসায় এখন সেই সমস্যা নিয়ে চিন্তায় সেচ দপ্তর।
এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য তিস্তা নদী অববাহিকায় গবেষণা ও সমীক্ষা করতেই এদিন রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নদী বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিদল এসে পৌঁছাল। ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট ও সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় তিস্তার বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নেবে বলে জানান সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক।