সানি সরকার, শিলিগুড়ি: বাংলার রাজনীতিতে ‘ঘোলাজলে মাছ ধরা’ কথাটা সকলেই শুনে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু ঘোলাজলে যে মাছ থাকছে না, তা বুঝতে পারছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। পলির জল যে তাঁদের জীবনেও ‘অভিশাপ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, টের পাচ্ছেন তাঁরা হাড়ে হাড়ে। সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ে তিস্তার জলে (Teesta River) মিশেছে বিষ, বলছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। বর্ষার আগে যে পরিস্থিতি বদলাবে না, এমনই বক্তব্য তাঁদের। সিংতাম থেকে রংপো, কালিঝোরা থেকে গজলডোবা, তিস্তার পাড় অপেক্ষা করে রয়েছে বৃষ্টির জন্য।
তিস্তায় মাছের অভাব ছিল না। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর হ্রদ বিপর্যয়ের পর জল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে নানান প্রজাতির মাছ। কিছু মাছ পাওয়া গেলেও তা ডাউনস্ট্রিমে। বিপর্যয়ের জেরে মাছ এবং জলজ প্রাণীর প্রজননে যেমন ব্যাঘাত ঘটেছে, তেমনই জল লবণাক্ত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কোচবিহার ন্যাস-এর অরূপ গুহ বলেন, ‘মাছের ডিম পাড়ার পরপরই বিপর্যয়টা ঘটেছে। জলের তোড়ে মাছ এবং ডিম, সবই ভেসে চলে গিয়েছে বা পলির নীচে চাপা পড়েছে। ফলে নির্বংশ হয়েছে জলজ প্রাণীরা। জলের মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশে থাকতে পারে।’ জলপাইগুড়ি নদী গবেষক জাতিস্মর ভারতী বলেন, ‘তিস্তায় এখন নদীখাতে শুধুই পলি। স্রোতবিহীন তিস্তায় মাছ থাকবে কী করে?’
নদী বিশেষজ্ঞদের মতো তিস্তার জলে বিষ মিশেছে বলে মনে করছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারাও। পাহাড়বাসী কয়েকজন জানালেন, তিস্তার জল ব্যবহার করলে বাড়ছে চর্মরোগ। রংপোর বাসিন্দা রবিন ভুজেল বললেন, ‘দু’-একদিন জল ব্যবহার করলে আপনি বুঝবেন না। কিন্তু কয়েকদিন ব্যবহারের পর হাতের চামড়া উঠে যাচ্ছে। এমনটা কিন্তু ছিল না তিস্তার জল।’ তিস্তাবাজারের প্রেম ভুটিয়া এবং ২৯ মাইলের ভুট্টু রসাইলির অভিজ্ঞতাও এক। সিকিমে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ফার্টিলাইজার কোম্পানির সংখ্যা কম নয়। জলের তোড়ে এমন একাধিক কারখানা তিস্তায় ভেসেছে। গোলা-বারুদ সহ বেশ কয়েকটি সেনাছাউনিও জলের তলায় গিয়েছে। ফলে আর্সেনিক, সিসা, পারদের মতো বিভিন্ন ধাতব পদার্থ জলে মিশেছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের গান পাউডারও জলে মিশতে পারে। যে কারণে জল বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের সুপার ডাঃ কল্যাণ খান মনে করেন, ‘বিভিন্ন ধাতব পদার্থের মিশ্রণে তিস্তায় মাইক্রো ইকো সিস্টেম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সঙ্গে জল পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’ বাকিদের মতো তিনিও মনে করেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত দুটি বর্ষা প্রয়োজন।