করণদিঘি: সুধানী নদীতে আর্থমুভার দিয়ে বালি তোলার ফলে তৈরি হয়েছিল গর্ত। আর খেলতে খেলতে সেই গর্তে পড়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল তিন শিশুর। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘির দোমোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম চোউনাগরা গ্রামে। মৃত শিশুদের নাম রোজিনা খাতুন (৯), তাহশিনা খাতুন (৭) ও মহম্মদ রিজুয়ান (৪)। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় করণদিঘি থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এবিষয়ে আইসি পলাশ মহন্তকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য মেলেনি। বিএলএলআরও গৌর সোরেনও ফোন ধরেননি।
উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘিতে বালিমাফিয়াদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। অভিযোগ, বিভিন্ন নদীতে আর্থমুভার নামিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলে পাচার করছে এক শ্রেণির মাফিয়া। একই ছবি দেখা গিয়েছে দোমোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম চোউনাগরা গ্রামের সুধানী নদীতেও। সেখানেও নদীতে আর্থমুভার নামিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ নেতার মদতেই এই অবৈধ কাজকর্মের রমরমা বলে অভিযোগ। বালি তোলার কারণে নদীতে তৈরি হয়েছে গর্ত। বৃষ্টিতে গর্তগুলিতে জমেছে জল। বাইরে থেকে জলের পরিমাণ আন্দাজ করা কঠিন। এরফলে একদিকে যেমন নদীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তা আবার প্রাণঘাতীও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাফিয়ারাজের জন্য প্রশাসনের উদাসীনতা ও ঢিলেঢালা নজরদারিকেই দায়ী করেছেন চোউনাগরা গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, সুধানী নদীতে আর্থমুভার নামিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। তার জেরেই নদীর বুকে গর্ত তৈরি হয়েছে। এদিন একই বাড়ির ওই তিন শিশু খেলতে খেলতে গর্তে পড়ে যায়। সেখানে গভীরতা বেশি থাকায় জলে ডুবে মৃত্যু হয় তাঁদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারি বেগমের কথায়, বৃহস্পতিবার সাদ্দাম হোসেনের দুই মেয়ে রোজিনা, তাহশিনা, ছেলে রিজুয়ান এবং আরও একটি তিন বছরের শিশু বাড়ি থেকে অল্প দূরত্বে সুধানী নদীতে হাঁটু জলে খেলছিল। খেলতে খেলতে তারা গর্তে পড়ে তলিয়ে যায়। তিন বছরের বাচ্চাটি তা দেখে বাড়িতে গিয়ে খবর দেয়। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন নদীর তীরে পৌঁছোন।
মৃত শিশুদের মামা আব্দুর রশিদ জানান, তাঁরা তিন জনকে জল থেকে তুলে করণদিঘি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। করণদিঘি থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
পশ্চিম চোউনাগরা গ্রামের ঘটনায় প্রশাসনের কর্তা ও তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছেন এলাকার যুব কংগ্রেস সভাপতি মহম্মদ সরোবর আলম। তাঁর প্রশ্ন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে নদী থেকে বালি-মাটি তোলা হচ্ছে? নদী থেকে অবৈধভাবে বালি-মাটি তোলা বন্ধ না হলে কংগ্রেস কর্মীরা বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়দের কথায়, প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই মর্মান্তিক পরিণতি হল তিন শিশুর। অন্যদিকে, এবিষয়ে প্রশাসনের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বালি পাচারে মদতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে একই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়াও। সেখানেও অবৈধভাবে বালি তোলার ফলে তৈরি হওয়া গর্তে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল তিন নাবালকের। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার একই ছবি দেখা গেল করণদিঘিতে। সেকারণে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের ঘুম ঠিক কবে ভাঙবে?