বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: পাঠক এবং কর্মী সমস্যায় ধুঁকছে ১১৪ বছরের পুরোনো ময়নাগুড়ি (Maynaguri) শহরের ঐতিহ্যবাহী রাধিকা লাইব্রেরি (Library)। একসময় পাঠকের ভিড়ে জমজমাট এই লাইব্রেরিতে বহু মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য বই থাকলেও বর্তমানে প্রায় পাঠকশূন্য হয়ে পড়েছে ইংরেজ আমলের এই লাইব্রেরিটি। যাঁরা একান্তই ভালোবেসে ফেলেছেন এই লাইব্রেরিকে, তেমনই দু’চারজন ছাড়া আর কেউ বর্তমানে লাইব্রেরিমুখো হচ্ছেন না।
দিনে-দিনে গুরুত্ব (Importance) বেড়েছে ময়নাগুড়ি শহরের। পুরসভায় উন্নীত হওয়ার পর শহরের ব্যস্ততা যেন আরও বেড়েছে। দিনভর যানবাহন ও মানুষজনের ভিড়ে জমজমাট ব্যস্ত ময়নাগুড়ি শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই শতাব্দীপ্রাচীন লাইব্রেরিটি কিন্তু কলরবের মাঝেও যেন নিঃসঙ্গতায় ভুগে চলেছে। লাইব্রেরিতে মোট চারজন কর্মী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে গ্রন্থাগারিক কৃষ্ণকান্ত রায় ছাড়া আর কোনও স্থায়ী কর্মী নেই। চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মী অস্থায়ীভাবে সপ্তাহে তিনদিন আসেন জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) থেকে। গত ২০১৯ সালের জুন মাসে অবসর নিয়েছেন লাইব্রেরির নৈশপ্রহরী উমাকান্ত রায়। তারপর থেকে নৈশপ্রহরীর পদ ফাঁকাই রয়েছে। উমাকান্তবাবু জানান, ‘২০০০ সালের আগে পর্যন্ত দিনে গড়ে চল্লিশজন পাঠক নিয়মিত আসতেন লাইব্রেরিতে। এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বই পড়ায় তেমন আগ্রহ চোখে পড়ছে না।’
লাইব্রেরিটির দেওয়াল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের (Market Complex) ছাউনি। সেই ছাউনির জল লাইব্রেরির দেওয়ালে পড়ায় দেওয়ালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দেওয়ালের জল চুইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার বই। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে দেওয়ালটি। উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৬৮ সালে বন্যার জলে লাইব্রেরির প্রায় তিন হাজার বই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে লাইব্রেরিতে মোট বই রয়েছে ১৫ হাজার ৭৩০টি।
লাইব্রেরি কমিটির সদস্য তথা ময়নাগুড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার গোবিন্দ পাল বলেন, ‘রাজ্য সরকারের বরাদ্দকৃত ১০ লক্ষের কিছু বেশি টাকায় একটি নতুন ঘর তৈরি করা হয়েছে। বইগুলি সেই নবনির্মিত ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নতুন ঘরটিতেই পাবলিক রিডিং রুম তৈরি করা হবে। পাঠকদের জন্য একটি শৌচাগারও নির্মাণ করা হয়েছে।’ রাধিকা লাইব্রেরি উন্নয়ন মঞ্চের সম্পাদক নিশীথকুমার রায় বলেন, ‘লাইব্রেরিটির কিছু জমি দখল হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিডিও এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিককে স্মারকলিপি দিয়েছি। পাশাপাশি সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ ময়নাগুড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক জয়ন্ত দাস বলেন, ‘খুব শীঘ্রই আমরা লাইব্রেরির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নামব।’ ডিস্ট্রিক্ট মাস এডুকেশন অ্যান্ড এক্সটেনশন অফিসার ইমরান শেখ বলেন, ‘জেলার সমস্ত লাইব্রেরিতেই কর্মী সংখ্যা কম রয়েছে। সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।’