সানি সরকার, শিলিগুড়ি: জলপুলিশ ও স্থলপুলিশের গল্প অনেকেরই জানা। অপরাধের এলাকা নিয়ে দুই থানার দায় এড়ানো নতুন নয়। পুলিশের (Police) এই ‘রোগ’ কি এবার রেলেও সংক্রামিত? দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে চলা দূরপাল্লার বিভিন্ন ট্রেনের (Train service) দেরি নিয়ে রবিবার রেলের দুই জোন পরস্পরের দিকে যেভাবে দায় ঠেলার চেষ্টা করল, তাতে এই প্রশ্ন তোলাই যায়। দার্জিলিং মেল থেকে তিস্তা-তোর্ষা, পদাতিক থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, প্রতিটি ট্রেনই এদিন অস্বাভাবিক দেরিতে উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছে। এমনকি, নিউ জলপাইগুড়িগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসও লেটলতিফ!
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলছেন, ‘আমাদের এলাকায় তো কোনও কাজ হচ্ছে না। ফলে ট্রেন লেট হওয়ার কথা নয়। ওদিকে কোনও কাজ হচ্ছে কি না জানা নেই।’ আবার আসানসোলে বড় প্রকল্পের কাজ হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। কিন্তু এই সমস্ত ট্রেন তো আসানসোল হয়ে চলাচল করে না? তাঁর জবাব, ‘ওরা হয়তো বলতে পারবে ট্রেন লেটের কারণ।’ তাহলে কি কুয়াশার জন্য ট্রেন লেট? দুই জোনেরই দাবি, দূরপাল্লার প্রতিটি ট্রেনেই ফগ পাস ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে।
রেলকর্তাদের এই দায় ঠেলাঠেলি অবশ্য ট্রেনযাত্রীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। করবেই বা কী করে? রেল যখন গতি বৃদ্ধির কথা বলছে, তখন যদি দার্জিলিং মেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন প্রায় চার ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছোয়, তখন যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তো দেখা দেবেই। হলদিবাড়িতে ট্রেনটি পৌঁছানোর নির্দিষ্ট সময় সকাল ৯টা ৫৫ মিনিট হলেও ট্রেনটি পৌঁছায় দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে। নিউ আলিপুরদুয়ারগামী তিস্তা-তোর্ষা সকাল ৫টা ৫০ মিনিটের পরিবর্তে পৌঁছেছে ১১টা ১২ মিনিটে। পদাতিক এবং উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের মতো একাধিক ট্রেন এদিন অস্বাভাবিক দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছোয়। এমনকি রেলের ‘বিজ্ঞাপনের মুখ’ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এদিন হাওড়া থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়লেও নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের বদলে ২টা ১৪ মিনিটে পৌঁছোয়।
এদিন দার্জিলিং মেল যখন এনজেপিতে (NJP) পৌঁছায়, তখন রেলের ঘড়ির কাঁটায় সময় দুপুর ১২টা বেজে ৩ মিনিট। পাক্কা চার ঘণ্টা লেট। ক্ষোভ উগরে দেন যাত্রীরা। অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘ভারতীয় রেল কোনওদিন আধুনিক হতে পারবে না।’ এদিন পদাতিক এক্সপ্রেস ৯টা ১৫ মিনিটের বদলে এনজেপিতে পৌঁছায় ১২টা ১৭ মিনিটে। এই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুরের বাসিন্দা অশোক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘মালদায় ঠিক সময়ই ট্রেনটি পৌঁছেছিল। কিন্তু তারপর থেকে গোরুর গাড়ির গতি পেয়ে যায়।’
উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এনজেপিতে সকাল ৬টা ২০ মিনিটের বদলে ৯টা ৩৫ মিনিটে এবং বামনহাটে ১১টা ১০ মিনিটের বদলে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে পৌঁছায়। এই ট্রেনের যাত্রীরাও ক্ষুব্ধ। ট্রেন দেরি হওয়ার কারণ তাঁদের কাছেও অজানা।