প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ বড়সড় বদল না এলে, এ যাত্রায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী গিরিরাজ সিং এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশেষ প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা দুরাশা৷ বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় দিল্লিতে থাকবেন না গিরিরাজ। ‘মনরেগা’য় রাজ্যের বকেয়া পাওনা আটকে রেখে লজ্জায় আবার তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা না করার জন্য আগেভাগে ‘চম্পট’ দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং স্বয়ং।
মঙ্গলবার নতুন সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে গিরিরাজ জানালেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে চিঠি দিয়েছেন ৫ অক্টোবর দেখা করার জন্য। আমি যদি দিল্লিতে থাকি তাহলে নিশ্চয়ই দেখা হবে। কিন্তু যদি ছত্তিসগড় বা মধ্যপ্রদেশে দলের নির্দেশে নির্বাচনী প্রচারে চলে যাই তাহলে দেখা হবে না। ওদের আবার পরে সময় নিয়ে আসতে হবে।’ উল্লেখ্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বকেয়া পাওনা আদায়ের দাবিতে ফের দিল্লি আসছেন ২ অক্টোবর। এই কর্মসূচিতে তাঁরা মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং প্রয়োজনে তাঁর দফতর ঘেরাও করার পরিকল্পনাও নিয়েছেন। গিরিরাজের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েও তার কোনও উত্তর পাননি তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার নতুন সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জানান, ‘তাঁরা চাইলে ঘেরাও করতেই পারেন। আমি যদি নির্বাচনী প্রচারের কাজে ছত্তিসগড় চলে যাই তাহলে দেখা করা সম্ভব নয়। দিল্লিতেই এই অবস্থা, বাংলা হলে না জানি কী হতো!’ প্রসঙ্গত ছত্তিসগড় নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো পর্যন্ত স্থির হয়নি।
এদিকে অক্টোবরের কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছে তৃণমূল শিবির। সোমবার বিকেলে সংসদ ভবনে হাজির হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিশেষ অধিবেশন অপেক্ষা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং-র হালহকিকতের খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। অক্টোবরের রণনীতি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন দলীয় নেতৃত্বের সাথে। মঙ্গলবার সংসদের বিশেষ অধিবেশনে যোগদান করলেও মোদী সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাংসদদের ফটো সেশন বয়কট করেন অভিষেক৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মতই ফটো সেশন বয়কট করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং লোকসভায় দলের চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কংগ্রেস সূত্রে দাবি করা হয়েছে এই তিন তৃণমূল সাংসদের মতই এদিনের ফটো সেশন বয়কট করেছেন বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সাংসদ, যাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলেন প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ৷ কেন তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের এই তিন সাংসদ কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত ফটো সেশন বয়কট করলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল শিবির সূত্রের দাবি, ‘যে সরকার সংসদের অমর্যাদা করে, দেশের সংবিধানকে অবমাননা করে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে লঙ্ঘন করে, যে সরকার দেশের জনপ্রতিনিধি বিরোধী সাংসদদের কন্ঠরোধ করে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ চৌকাঠে, সেই সরকারের আয়োজনে ফটো সেশন বয়কট করাই প্রতিবাদের সেরা পন্থা৷’
ফটো সেশনে উপস্থিত না হলেও অগ্রজদের প্রতি সৌজন্য প্রদর্শনে অভাব রাখেননি তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় কক্ষে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন সমাজবাদী পার্টি সাংসদ-অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। বেশ কিছুটা সময় তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে কাটান তিনি৷ অভিষেক এগিয়ে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন তাঁকে। জয়াও প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন অভিষেককে৷ তিনি জানান, ‘সংসদে এলে একবার এখানে আসি। মমতার টানেই আসা। যদিও তিনি এখন বিদেশে।’ তবু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে খুব খুশি জয়া৷ অভিষেক এর পর নতুন সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন। মোদী সরকারের ডাকা ফটো সেশন বয়কট করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। আগাগোড়া তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছেন গিরিরাজ সিং এর সার্বিক গতিবিধিতে। যদিও গিরিরাজ এখনও অধরাই।