গাজোল: ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের প্রকোপ তেমন দেখা যায়নি গাজোলে। যার ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুরের রস হচ্ছিল না। আর খেজুর রসের অভাবে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল খেজুর গুড় (Jaggery) তৈরির কাজ। তবে বছরের প্রথম দিন থেকে জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করায় আবার জোরকদমে খেজুর গুড় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শীতের (Winter)আমেজ বজায় থাকলে পৌষ পার্বণে গুড়ের ভালোই আমদানি হবে বলে মনে করছেন শিউলিরা।
গাজোল-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মুশিধাপ গ্রামের বাসিন্দা দর্প রায়। পেশায় প্রান্তিক কৃষক দর্প শীতের সময় খেজুর (Dates) গুড় তৈরির কাজ করেন। দর্প জানালেন, এলাকার প্রায় ৮০টি খেজুর গাছ লিজে নিয়ে রস সংগ্রহ করেন তিনি। তবে প্রতিদিন ৮০টি গাছে কলসি বাঁধতে পারেন না। অর্ধেক পরিমাণ গাছে বাঁধেন। দুপুরবেলা গাছে বাঁধ শুরু করেন। সন্ধ্যের মধ্যেই গাছে কলসি বাঁধা শেষ হয়ে যায়। এরপর ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগেই প্রত্যেকটি গাছ থেকে কলসি সংগ্রহ করতে হয়। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম থেকে চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত চলে খেজুর গুড় তৈরির কাজ।
দর্প বাবুর বড় ছেলে সুরজিৎ জানান, ভোরবেলা রস সংগ্রহের কাজটা দুই ভাই মিলে করেন। প্রতিদিন যে রস সংগ্রহ হয় তা ঘন করে রাখা হয়। এরপর প্রতি বুধবার সেই ঘন রস থেকে গুড় তৈরি করেন তাঁরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে গুড় তৈরির কাজ। তবে এই কাজ করতে গিয়ে যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয় তার তুলনায় লাভের অংকটা অনেক কম। তবুও এই কাজ করে বছরে কয়েক মাসের সংসারের খরচ উঠে আসে। বাবার কাছ থেকে কাজ শিখছেন তাঁরা। তারাও আগামী দিনে এই পেশায় থাকতে চান।
জানা গিয়েছে, মান অনুযায়ী গুড় বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি। তবে কেউ যদি একেবারে খাঁটি গুড় নিতে চান তাহলে আগে অর্ডার দিতে হয়। ৫০০ টাকা কেজির নীচে সেই গুড় বিক্রি করলে লাভ তেমন থাকে না। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় এই গুড়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে গুড় সংগ্রহ করে নিয়ে যান। বছরের শেষে ঠিকভাবে শীত না পড়ায় এতদিন তেমন ভাবে গুড় তৈরি হচ্ছিল না। তবে নতুন বছরের শুরুতে শীত পড়তেই গুড় তৈরির কাজে শুরু হয়েছে তুমুল ব্যস্ততা।