মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: কথায় বলে ‘রূপ নাই বেটির তাই রূপের জন্যি কান্দে’ , কিন্তু সবার যে চন্দ্রকলার মতো রূপ থাকবেনা সেটাই তো আসল। সেটাকেই ঘষামাজা করে যতদূর নিয়ে যাওয়া যাবে ততই স্কিন ঝকঝকে হবে, জেল্লা বাড়বে, দেখনদারিতে টেক্কা দেবে ডাকসাইটে সুন্দরীদেরকেও, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন একটু সময় আর মানসিক শান্তির যার ইদানীং খুব অভাব আমাদের জীবনে।গত ২০-২৫ বছরে বিজ্ঞানের তরতরিয়ে উত্থানের সাথে আমাদের জীবনের ব্যস্ততা বেড়েছে, অথচ এমনটা হবার কিন্তু কথা ছিলো না। বিজ্ঞানের দৌলতে স্থির হয়ে বসার বদলে অস্থিরতা ক্রমাগতই বাড়ছে আর তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ত্বকে, চুলে , চোখে এবং মস্তিষ্কে , আর সেই থেকেই যত বিপত্তি। আমরা আসল বিষয়টা না বুঝে আয়নায় দেখছি চোখের নীচে কালি, নিষ্প্রভ ত্বক আর চুল পাতলা হয়ে যাওয়া আর বাজারের যত কসমেটিকস আছে কিনে ঘর ভরিয়ে পকেট ফাঁকা করে ত্বক ও চুলের বারোটা বাজাচ্ছি দিন প্রতিদিন। আজকের জেন- ওয়াই মেয়েদের ত্বকচর্চায় এক অদ্ভুত অনাগ্ৰহ, কিন্তু সুন্দর দেখানোর জন্য মেকআপের ভীষণ আগ্ৰহ, দিনরাত এই সিন্থেটিক জিনিস ত্বকে মেখে মেখে বিশ্রী ত্বক নিয়ে কান্নাকাটি, সেই ত্বককে ঢাকতে আবারো একপ্রস্থ চড়া মেকআপ। তাহলে আশু করণীয় কি ? প্রথমেই লিপস্টিক আর কাজল ছাড়া সব মেকআপ চোখের আর মনের আড়ালে রাখুন। দ্বিতীয় স্তরে প্রাকৃতিক রূপচর্চার উপাদান চোখের সামনে রাখুন, ভাগ করে নিন সকাল -দুপুর-রাত হিসেবে, এবার শুরু করুন।
সকাল — ১) ঘুম থেকে উঠেই প্রথম কাজ রোজ টোনার দিয়ে মুখ ও হাত পরিষ্কার করে ভেজা অবস্থায় রাখুন। চোখের ওপরে রোজ টোনারে তুলো ভিজিয়ে ১০মিনিট রেখে আবারও মুখ ও হাত ঐ তুলো দিয়েই সাফ করে নিন। এবার কাঁচা দুধে তুলো ডুবিয়ে একই ভাবে মুখ হাত মুছে নিন, দেখতেই পাবেন ময়লা ধুয়ে যাচ্ছে ত্বক থেকে। এবার মুলতানি মাটিতে মেশান কাঁচা দুধ, মধু, বেসন । যদি রোদে না বেরোন তাহলে আধা চামচ হলুদের রস মিশিয়ে ১০-১৫ মিঃ রেখে ধুয়ে নিন কুসুম গরম জলে। অবশ্যই ডে-ময়শ্চারাইজার আর সানস্ক্রীন অ্যাপ্লাই করুন ব্যস।
২) দইতে যদি অসুবিধে না হয় তাহলে জল ঝরিয়ে আধা কাপ দইয়ে মধু, হলুদ, মুলতানি মাটি ও টোম্যাটো বাটা মিশিয়ে হাতে মুখে মেখে ১৫ মিঃ রেখে ধুয়ে ময়শ্চারাইজার ও সানস্ক্রীন লাগাতে হবে। তার আগে অবশ্যই গোলাপজল আর কাঁচা দুধের পরিষ্করণ পর্বটা থাকবে ।
৩) এর কোনোটাই যদি আপনার টাইমের সঙ্গে না মেলে তাহলে গোলাপ জল কাঁচা দুধের পর্ব সেরে তালুতে এক চামচ মধু নিয়ে আঙুল দিয়ে ঘষে গরম করে মুখে হাতে মাখুন ,১৫ মিঃ পর হালকা গরম জলে তুলো দিয়ে ঘষে তুলে ক্রীম ও সানস্ক্রীন।
এরপর আসবে স্নানের সময়ের চর্চা—- ১) আমাদের ত্বক নোংরা লাগে দেখতে মৃতকোষ জমে। একে তুলে ফেলতে গেলে স্ক্রাবিঙের দরকার সেটা আপনি সুজি, চালের গুঁড়ো,চিনির সঙ্গে বেসন, সর, ময়দা , লেবুর রস আপনার ত্বকের সহ্যক্ষমতা অনুযায়ী আলতো ঘষে হালকা গরম জলে স্নান করুন। বডি অয়েল বা লোশন লাগান।
২) ভার্জিন অলিভ অয়েলে মধু ফেলে গরম করে উষ্ণ গরম অবস্থায় ত্বকে লাগিয়ে ঘষতে থাকুন। আঠা আঠা মনে হবে ঠিকই কিন্তু নোংরা উঠে যাবে। তেল পছন্দ না হলে শাওয়ার জেল লুফা দিয়ে ঘষে তেল তুলে নিতে পারেন কিন্তু যেহেতু হেমন্তের পরশ আছে তাই ভারী লোশন না লাগালে ত্বক শুষ্ক হবে।
৩) গোলাপের পাঁপড়ি বাটা, মুলতানি মাটি, লেবুর রস, হলুদের রস, টোম্যাটো বাটা,আমন্ড বা চিনে বাদাম বাটা, ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে তৈরী করুন ত্বকের খাবার। এই মিশ্রণটি ওপেন পোরস, পিগমেন্টেশন,অসমান রঙের ত্বককে মোকাবেলা করে। এই মিশ্রণটি ত্বকে শুকোতে দিতে হবে কিন্তু ৭৫% , তারপর জল ঢেলে ভালোভাবে ভিজিয়ে ঘষে তুলে নিতে হবে।
৪) ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের কাঁচা দুধে পাঁউরুটি ভিজিয়ে চটকে টোম্যাটো বাটা, মধু দিয়ে ভালোভাবে সারাগায়ে মাখিয়ে একটু শুকিয়ে লুফা দিয়ে ঘষে নিন। ভারী বডিলোশন মাখিয়ে দিন।
৫) ছোটদের জন্য সরময়দা একটা সেফ অপশন, তবে তাতে একটু হলুদের রস দিয়ে দেবেন, ওতে ইনফেকশন কেটে যাবে, ত্বকের বর্ণও উজ্জ্বল হবে।
চুলের জন্য — ১) তেল অবশ্যই মাখতে হবে তারপর হট টাওয়েল ট্রিটমেন্ট করে শ্যাম্পু ।
২) অনেকেই চুলে হেনা লাগাতে চাননা, কিন্তু প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ও রং শুধু হেনাই দিতে পারে। সাদা চুল হতে থাকলে কফি ও চাপাতা গরম জলে ফুটিয়ে হেনা ভেজান সারারাত। সকালে ওতে ডিমের কুসুম, মধু , লেবুর রস,কফি, ভিটামিন -ই অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, মেথিবাটা মিশিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা এরপর সাদা চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে তারপর পুরো চুলে অ্যাপ্লাই করুন। ঐ দিন শ্যাম্পু নয়, রাতে বা পরদিন সকালে শুকনো চুলে পছন্দের তেল মেখে ৩ঘন্টা রেখে তবেই শ্যাম্পু করুন। কন্ডিশনার লাগান, নাহলে চাপাতা ফুটিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে সেটাও মাথায় ঢালতে পারেন তবে আর জল ব্যবহার করবেননা।
৩) চটজলদি হেয়ারপ্যাকে আমলা, রিঠা , শিকাকাই, মেথি গুঁড়ো বা বাটার সঙ্গে খাঁটি নারকেল তেল,হেনা ও কফি গরম চায়ের লিকার দিয়ে মিশিয়ে মেখে নিন চুলে। ১ ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করুন।
৪) রিঠা গরম জলে ভিজিয়ে শ্যাম্পু করতে পারেন তবে চোখ বাঁচিয়ে।
৫)নারকেল তেল, আমলকী ও রসুনের রস মিশিয়ে সিঁথি করে চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগান, ১ ঘন্টা রেখে ধুয়ে নিন। এতে নতুন চুল গজাবে সাদা চুল খুব ধীরে ধীরে কালো হতে থাকবে।
এই রকম ঘরোয়া কিন্তু উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকে ও চুলে ব্যবহার করতে থাকলে অচিরেই আপনার জেল্লায় কাৎ হবেন অনেকেই। তখন আর কোথায় লাগে মেকআপ, নিজের ঔজ্জ্বল্যে নিজেই উদ্ভাসিত হবেন প্রতিদিন প্রতিক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন: Beauty Tips | বিয়ের মরশুমে নিমন্ত্রণে নিজের জেল্লায় টেক্কা দিন কনেকে