বীরভূম: বৃহস্পতিবার কৌশিকী অমাবস্যা। এদিন তারাপীঠে শুরু হয়েছে মায়ের বিশেষ পুজো। পুজোর সূচনা হয় মঙ্গলারতির মাধ্যমে। প্রতিবার কৌশিকী অমাবস্যায় অগণিত ভক্ত আসেন মায়ের পুজো দিতে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
এদিন ভোর ৪টা ৩১ মিনিটে কৌশিকী অমাবস্যার তিথি শুরু হয়। অমাবস্যার তিথি চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ৬টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত। সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ। তারাপীঠে মা তারার মন্দিরের পাশেই দ্বারকা নদীর পাড়ে রয়েছে তারাপীঠ মহাশ্মশান। তারাপীঠের এই মহাশ্মশানের পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সপ্তঋষি বশিষ্ট মুনি তপস্যা করে মা তারার দর্শন পেয়েছিলেন। কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতেই এই শ্মশানের শ্বেতশিমুল বৃক্ষের নীচে সাধনা করে মা তারার দর্শন পেয়ে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক বামদেব। সেই সময় থেকেই মহাসমারোহে কৌশিকী অমাবস্যা পালিত হয়ে আসছে তারাপীঠে। তাই কৌশিকী অমাবস্যার রাতকে তারা রাত্রিও বলা হয়। এদিন সারাদিন তারাপীঠে চলবে পুজো অর্চনা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতে তারাপীঠের মহাশ্মশানে তন্ত্র সাধনা করতে আসেন বহু তন্ত্রসাধক। মহাশ্মশানে জ্বলে ওঠে হাজার হাজার হোমকুণ্ড। মা তারার দর্শন পেতে এবং সাধনায় সিদ্ধিলাভ পাওয়ার আশায় তারাপীঠে এসে ভিড় জমান তন্ত্রসাধক থেকে সাধারণ পুণ্যার্থীরাও। তারাপীঠে আসা পুণ্যার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে মা তারার মন্দিরে পুজো দিতে পারেন তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ ও তারাপীঠ মন্দির কমিটি। তারাপীঠ মন্দিরের প্রবেশ পথগুলিতে বসানো হচ্ছে মেটাল ডিটেক্টর গেট। তারাপীঠ মন্দির এলাকা জুড়ে বসানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের জন্য তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী বাঁশের ব্যারিকেড।
মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে ১৭৫ জন বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হবে। বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা এড়াতে রাজ্য পুলিশের আধিকারিক সহ হাজার জন পুলিশ কর্মী এবং ১ হাজার ৭০০ জন সিভিক ভল্যান্টিয়ার মোতায়েন করা হবে। থাকবে মহিলা ও সাদা পোশাকের পুলিশ। বুধবার দুপুর ২টা থেকেই তারাপীঠে কোনও গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে রামপুরহাটের মুনসুবা মোড়, চাকপাড়া মোড়, মল্লারপুরের আম্বা মোড়, বাহিনা মোড় তারাপীঠ থানার বেসিক মোড়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে সমস্ত গাড়ি। তবে সেখান থেকে তারাপীঠ মন্দির পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য রাখা থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণে টোটো ও অন্যান্য গাড়ি।
ইতিমধ্যেই তারাপীঠের হোটেল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। আবাসিকদের কাছ থেকে যাতে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া না নেওয়া হয় তার জন্য হোটেল ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি তারাপীঠে অলিতেগলিতে যাতে দমকলবাহিনীর গাড়ি যাতায়াত করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই মতো বুধবার দমকলবাহিনীর লোকজনদের নিয়ে তারাপীঠ মন্দিরের প্রধান রাস্তাগুলিতে অভিযান চালায় রামপুরহাট মহকুমা শাসক ও রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ ও জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগ থেকে পানীয় জলের পাউচ বিতরণ করা হবে।