সানি সরকার, শিলিগুড়ি : স্টিযারিংয়ে অভ্যস্ত কারও হাতে উঠেছে কোদাল। কারও আবার দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে একটু কাজের খোঁজে। যাঁদের কাজ জুটছে, তাঁদের মুখে হাসির রেখা দেখা দিলেও অধিকাংশেরই দিনের পর দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে। করোনা-লকডাউন পরিস্থিতির থেকে রেহাই মিলবে কবে, উত্তর খোঁজার চেষ্টায় নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের চালকরা। ভরা পর্যটন মরশুমে না খেতে পারার যন্ত্রণায় পাহাড়ের গাড়ির চালকরাও। তাঁদের খোঁজ কেউ রাখেন না, বলছেন দার্জিলিংয়ে হেমন্ত গুরুং থেকে শিলিগুড়ির পিন্টু বিশ্বাস।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন যেমন বর্তমানে রয়েছে যাত্রীশূন্য, তেমনই খাঁখাঁ করছে স্টেশনের বাইরের দিকটাও। শুধু হাতেগোনা কয়েকটি গাড়ি স্ট্যান্ডবাই দীর্ঘদিন ধরে। এমন ছবি শেষ কবে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না এনজেপিতে কর্তব্যরত কয়েকজন রেলকর্মী। লকডাউন থাকলেও অভ্যাসবশত প্রায় প্রতিদিনই স্টেশন চত্বরে আসছেন বিজয় দাস, যতীন রায়ের মতো কয়েকজন চালক। পেশাগত জীবনে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে অতীতে কোনও দিন পড়তে হয়নি বলে বক্তব্য তাঁদের। ভগবান দত্ত বলেন, সঞ্চয় শেষ হয়ে গিয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে। দিনের পর দিন লকডাউনের জন্য এখন খাবার জোটানোটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী কষ্টের মধ্যে রয়েছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। যতীন জানান, কয়েকদিন আগে জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ করে কিছু উপার্জনও করেছেন। কিন্তু এখন পুলিশের ভয়ে কাজের খোঁজে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে পারছেন না। ভক্তিনগরের বাড়ি থেকে এনজেপি এসে বসে থাকছেন। তাঁর মতো অনেক চালকই এনজেপিতে আসছেন এই আশায়, যদি রেলের কারও গাড়ি প্র.োজন হয়। এমনই একজন শুভঙ্কর বৈরাগী বলেন, লকডাউনের শুরুতে টুকটাক ভাড়া নিয়েছিলেন রেলের কর্তারা। কিন্তু এখন সেটাও হচ্ছে না। তবুও আসি যদি ভাড়া পাওয়া যায়।
একই পরিস্থিতির শিকার পাহাড়ের গাড়ির চালকরাও। লকডাউনের জেরে পাহাড় শুনসান। ফলে রুটি-রোজগারে টান পড়েছে এখানকার গাড়িচালকদেরও। স্বাভাবিকভাবে লকডাউন প্রত্যাহার হবে কবে, জানতে চাইছেন আমআদমি। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওযার পরও কী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, ভাবনায় ফেলে দিয়েছে গাড়ির চালকদের। দার্জিলিংয়ের ক্লাবসাইড রোড ট্যাক্সি ড্রাইভার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি হেমন্ত গুরুং বলেন, পর্যটকদের ওপরই আমরা নির্ভরশীল। তাই লকডাউন উঠলে পর্যটক যদি আসে, তবেই আমরা রোজগারের মুখ দেখতে পারব। কিন্তু করোনার প্রভাবের জেরে পর্যটক আসবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। গাড়িচালকদের দুরবস্থা নিয়ে চিন্তিত পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক। তাই চালকদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, চালকদের বাদ দিয়ে পর্যটনশিল্প হতে পারে না। তাই আমরা সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখছি চালকদের আর্থিক সাহায্য করার জন্য। সংগঠনের তরফেও তাঁদের সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।