শুভঙ্কর চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার : তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর শেষ কয়েক বছরে আলিপুরদুয়ারের কোন কোন নেতার আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে পিকের টিম সেই তালিকা তৈরি করল। সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর একাধিক মহল থেকে পিকের টিমের কাছে অভিযোগ যায়। দলের রাজ্য নেতাদের কাছেও অভিযোগ জমা পড়ে। নেতাদের একটা অংশ দলের নাম ভাঙিযে বেআইনিভাবে টাকা রোজগার শুরু করেছেন বলে রাজ্য নেতৃত্ব ও পিকের টিমকে জানানো হয়। অন্যদিকে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় এবং বিজেপি তা লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কাজে লাগায়। সম্প্রতি তণমূলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ফের অবৈধ কারবারের অভিযোগ জমা পড়েছে বলে খবর। এর ভিত্তিতেই পিকের টিম তদন্ত শুরু করেছে। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, অনেকের চালচলনে হয়তো পরিবর্তন এসেছে। তবে কে কোথায় কীভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ না পেলে তা নিয়ে বলা সম্ভব নয়।
সূত্রের খবর, এখন পর্যন্ত পিকের টিম যে তালিকা তৈরি করেছে তাতে জেলার প্রায় এক ডজন নেতার নাম উঠে এসেছে। পাতলাখাওয়া এলাকার এক নেতার নাম তালিকার শীর্ষে রয়েছে। একসময় পঞ্চায়েত স্তরে জনপ্রতিনিধি থাকা ওই নেতা শেষ কয়েক বছরে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন বলে পিকের টিম হদিস পেয়েছে। ওই নেতা পাতলাখাওয়া এলাকা ছাড়াও আলিপুরদুয়ার শহরে একের পর এক জমি কিনেছেন। শহরে তাঁর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও রয়েছে। দলের একাধিক ঠিকাদার নেতার নাম তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে। ওই ঠিকাদার নেতাদের একজন যথেষ্ট প্রভাবশালী। যখন যিনি দলের জেলা সভাপতি পদে বসেন ওই ঠিকাদার তখন তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে চলে আসেন। তৃণমূলের জেলাস্তরের একাধিক নেতার বিরুদ্ধেও দলের নাম ভাঙিযে সম্পত্তি বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। কুমারগ্রাম ও কামাখ্যাগুড়ির দুই নেতার সম্পত্তিও পিকের টিমের নজরদারিতে রয়েছে। পিকের টিম ওই নেতাদের মধ্যে কুমারগ্রামের নেতার আলিপুরদুয়ার শহরে জমি-বাড়ি কেনা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। সূত্রের খবর, দিদিকে বলো-তে আলিপুরদুয়ারের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে চাকরি পাইযে দেওয়ার নামে টাকা তোলার অভিযোগ জমা পড়েছে। খাসজমি দখল, জলা বুজিয়ে বিক্রি করার মতন গুরুতর অভিযোগও উঠেছে। পিকের টিমের সদস্যরা যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। যেসব নেতার নামে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের অতীত সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ওই নেতারা আগে কীরকম জীবনয়াপন করতেন, বর্তমানে তাঁদের জীবনযাত্রায় কী ধরনের রদবদল হয়েছে তা জানতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নেতাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পুর প্রতিনিধি ও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিনিধি বেশ কয়েক জনের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পুর এলাকায় একের পর এক জলাভূমি ভরাট করে কারা লক্ষ লক্ষ টাকায় সেগুলি বিক্রি করে দিল এবং সেই টাকা কার কার কাছে গিয়েছে তা জানতেও পিকের টিম সক্রিয় হয়েছে। আলিপুরদুয়ারে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছেন। দলের পুরোনো নেতা মৃদুল গোস্বামীকে জেলা সভাপতি পদে বসিয়ে তাঁরা আগেই পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ারের দলীয় পর্যবেক্ষককেও পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করতে ফুলেফেঁপে ওঠা নেতাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিযে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। জেলার পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক বলেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে স্বচ্ছভাবে, সততার সঙ্গে রাজনীতি করতে বলেছেন। সেই নির্দেশ অনুসারেই দল চলবে।