গৌতম দাস, গাজোল : করোনা সংক্রমণ রুখতে সারাদেশে জারি করা হয়েছে লকডাউন। সামান্য সময়ে জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্ধ রয়েছে সমস্ত দোকান। বন্ধ গণ পরিবহণ ব্যবস্থা। লকডাউন ঘোষণা হতেই তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গাজোল জামে মসজিদ। তালা পড়েছে বিভিন্ন মন্দিরের দরজাতেও। আর এসবের জেরে চরম সমস্যায় পড়েছেন ভিক্ষাজীবীরা। মূলত মন্দির-মসজিদ সহ বিভিন্ন দোকান, গৃহস্থ বাড়িতে ভিক্ষে করে দিন কাটত এঁদের। কিন্তু লকডাউনে সমস্ত কিছু বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের উপার্জন। অর্ধাহারে-অনাহারে কোনওরকমে দিন কাটছে তাঁদের।
গাজোল জামে মসজিদে প্রতিদিন নমাজ পড়তে আসেন বহু ধর্মপ্রাণ মুসলিম। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হতেই কর্তৃপক্ষ মসজিদ তালা বন্ধ করে দেয়। মসজিদের মোয়াজ্জিন আবদুল নুর বলেন, করোনা সংক্রমণ রুখতে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা হওয়ামাত্র আমাদের মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে কেউ আসলেও তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাইকে বলা হয়েছে, নিজেদের সুরক্ষার খাতিরে এই কদিন যেন প্রত্যেকে বাড়িতেই নমাজ পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল গফুর, হাতেম শেখ বলেন, প্রতিদিনই এই মসজিদে প্রচুর মানুষ নমাজ পড়তে আসেন। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হওয়ামাত্র মসজিদে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের তরফে সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে, অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সবাই যেন নিজেদের বাড়িতেই নমাজ আদায় করেন। দেশের মানুষের স্বার্থে সরকারের তরফে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।
লকডাউনেরে তালা পড়েছে গাজোলের বিভিন্ন বড় মন্দিরেও। বন্ধ গাজোল তারামায়ের মন্দির। নিয়ম মেনে এই মন্দিরে প্রতিদিন তিনবেলা পুজো হয়। হয় অন্নভোগ ও আরতি। পুজো দিতে প্রতিদিন মন্দিরে আসেন বহু মানুষ। কিন্তু লকডাউনে পুজোতেও রাশ টানা হয়েছে। মন্দির কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা উদয় দাস বলেন, শুধুমাত্র নিয়মরক্ষার জন্য মাকে ভোগ প্রসাদ নিবেদন করে পুজো শেষ করা হচ্ছে। সেই সময় মন্দিরে থাকেন শুধু পুরোহিত ও তাঁর এক সহকারী। আমরাও সাধারণ মানুষকে আবেদন করছি, এই সময় বাড়িতে বসে মাকে স্মরণ করুন। এখন মন্দিরে না আসাই ভালো।
এদিকে মন্দির-মসজিদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবল সমস্যায় পড়েছেন ভিক্ষাজীবীরা। অনেক ভক্ত ভিক্ষাজীবীদের দান করেন। এছাড়া দোকান ও গৃহস্থের বাড়িতে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউনের জেরে সমস্ত আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের। দোকানে ভিক্ষে পাচ্ছেন না। গৃহস্থের বাড়িতে যেতেও কেউ সাহস পাচ্ছেন না। যেটুকু সঞ্চয় ছিল, তা দিয়ে কোনওরকমে অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের।