নাগরাকাটাঃ গত বুধবার ডাক্তারকে দেখেই নিজেকে নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছিল বুনোটি। চোখে ছিল সুস্থ করে দেওয়ার কাতর আর্জি। যা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বনকর্মীরা। এরপর গরুমারা বন্যপ্রাণ শাখার চিকিৎসক ডাঃ শ্বেতা মন্ডলের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই চিকিৎসা শুরু হয়ে যায় অসুস্থ হাতিটির। এবারে বনকর্মীদের দেখতে পেলেই নিজেই অতিকষ্টে খুঁড়িয়ে এসে দূর থেকে ছুড়ে দেওয়া ওষুধ খেতে শুরু করেছে সেটি। প্রচেষ্টায় সাড়া দেওয়ায় হাতিটিকে সুস্থ করে তোলা নিয়ে আশাবাদী বন দপ্তর। ডায়না রেঞ্জের (Daina Range) রেঞ্জার অশেষ পাল বলেন, আমরা লেগে রয়েছি। হাতিটিও সুস্থ হতে মরীয়া। দেওয়া মাত্রই ওষুধ খেয়ে নিচ্ছে। ইশ্বর করুক প্রাণীটি দ্রুত ভালো হয়ে যাক।
ডায়না রেঞ্জের অন্তর্গত খেরকাটার জঙ্গলের ধার দিয়ে বয়ে চলা কালাপানি নামে একটি ছোট নদীর ধারে বেশ কয়েকদিন ধরেই দিনের বেলা হাতিটি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছে। তাঁর পেছনের ডান পায়ের মাঝামাঝি অংশে সংক্রমণ রয়েছে। ফলে ফুলেও গেছে পায়ের ওই অংশ। হাঁটা চলা কার্যত করতেই পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে নজিরবিহীন ভাবে অন্য হাতিরাও ওদের সঙ্গীকে সাহায্য করতে মরীয়া। বন দপ্তর জানাচ্ছে প্রতিদিন নিয়ম করে দুটি দাঁতাল বিকেল বেলা পাশের ধূমপাড়া নামে একটি গ্রামে ঢোকার আগে ওই অসুস্থ হাতিটিকে নদীর ধার থেকে ঠেলে জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেয়। আবার সকালে ফেরার সময় বন থেকে একই কায়দায় বের করে এনে নদীর ধারে রেখে দেয়। বনকর্মীদের অনুমান যাতে অন্তত পানীয় জলের কোন কষ্ট না হয় সেজন্যই সাথী হাতি দুটির এমন কর্মকান্ড। শুক্রবার বিকেলে ওষুধ খাওয়ানোর সময় একটি হাতি তো সারাক্ষণ আশ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। ডায়না রেঞ্জের বনকর্মীদের ওই কাজটি করতে দিতে কোন বাঁধা সেও দেয় নি।
ঠিক কিভাবে খাওয়ানো হচ্ছে ওষুধ? বৃহস্পতিবার বিকেলে ও শুক্রবার সকালে কলা গাছের খোলায় ভরে নদীতে নেমে সুলকাপাড়া বিটের ভারপ্রাপ্ত বিট অফিসার স্বপন সেনের নের্তৃত্বে বনকর্মীরা দূর থেকে ওষুধ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। তবে এদিন বিকেল থেকে পন্থা পরিবর্তন করা হয়েছে। কলার খোলার পরিবর্তে আস্ত পাকা কলার মধ্যে ওষুধ ভরে তা দেওয়া হচ্ছে। একেকটি কলায় দুটি করে ট্যাবলেট থাকছে। কলার খোলার পরিবর্তে কলায় ভরে দেওয়া ওষুধ খেতেই হাতিটির বেশী আগ্রহ বলে বন কর্তারা মনে করছেন। দু একবার লাউ এর ভেতর ওষুধ ঢুকিয়েও দেওয়া হয়। শনিবারও একই কায়দায় ওষুধ খাওয়ানো হবে। এদিকে দিনভর নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা হাতিটির যাতে খাদ্য সংকট না নয় সেজন্য প্রচুর কলাগাছ কেটে সেটির সামনে রেখে আসা হচ্ছে। একজনকে ওই দ্বায়িত্ব দিয়ে রেখেছে বন দপ্তর। আশপাশের বাসিন্দারাও চাইছেন হাতিটি যাতে দ্রুত সুস্থ হয়। প্রার্থনাও করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: Accident Case | অসুস্থ বন্ধুকে দেখতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু যুবকের