বালুরঘাট: আত্মীয়দের চরম অবহেলায় লকডাউনে গ্রামের গির্জার বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন এক দৃষ্টিহীন মহিলা। নিজের নিকট আত্মীয় এলাকার বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে জয়ন্তী সোরেন নামের ওই বয়স্ক মহিলার নিজের খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। গরিব গ্রামবাসীরাও লকডাউনের জেরে এখন কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। তাই তাঁরাও যে খুব একটা সাহায্য করতে পারছেন, তা নয়। এরমধ্যেও প্রতিবেশীরাই ওই মহিলার দেখভাল করছেন।
প্রাক্তন বামপন্থী পঞ্চায়েত সদস্য তথা গৃহবধূ ছোটন হাঁসদার গির্জা লাগোয়া বাড়ি হওয়ায় তিনি ওই মহিলার দেখাশুনা করছেন। তবে সরকারের কাছে জয়ন্তী সোরেনের সাহায্যের আর্তি জানিয়েছেন ছোটন হাঁসদা। বালুরঘাট শহর লাগোয়া খরাইল বাদবংগী গ্রামের এই গির্জায় আশ্রয় নেওয়া জয়ন্তীর জন্য এখন ভাবছে গোটা গ্রাম।
বালুরঘাট থানার নকশা গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তী সোরেন দৃষ্টিহীন। ছেলে ভিনরাজ্যে থাকে। স্বামীর অবহেলার দরুন লকডাউনের কিছুদিন আগেই তিনি বাদবংগী গ্রামে দিদি, জামাইবাবুর বাড়ি আসেন। দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে অনটন এবং দিদি অসুস্থ থাকার জন্য ওই অন্ধ মহিলাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। নিজের দিদির মেয়ে বুলবুলি বেসরা এলাকার বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য। তিনিও দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছেন। লকডাউনের জেরে ইচ্ছে থাকলেও জয়ন্তীদেবী তার নকশা গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। বাধ্য হয়ে গ্রামেই থেকে যান। শেষপর্যন্ত ঘুরতে ঘুরতে আশ্রয় মেলে আর এক হতদরিদ্র তথা প্রাক্তন বামপন্থী পঞ্চায়েত সদস্য ছোটন হাঁসদার বাড়ির সামনে। ছোটন হাঁসদা তাঁকে গ্রাম্য গির্জায় রাখার ব্যবস্থা করেন। একেই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার, সেখানে টানা একমাস জয়ন্তীকে রেখে তাঁর দেখভাল করেছেন ছোটন। কিন্তু দিন যত এগোচ্ছে ততই অভাব জাঁকিয়ে বসছে সংসারে। তাও তিনিও আর খরচ চালাতে পারছেন না। তাই এবার ছোটন হাঁসদা দৃষ্টিহীন জয়ন্তীর জন্য সরকারি সাহায্যের প্রার্থনা করছেন।
এদিন জয়ন্তী সরেন বলেন, চোখে দেখতে পাই না। দিদি জামাইবাবুর বাড়িতে ছিলাম, সেখান থেকেও বের করে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এই গির্জায় আশ্রয় নিতে হয়েছে।
বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য বুলবুলি সরেন বলেন, আমাদের সংসারেইই প্রবল অনটন। তাই কোনও উপায় নেই।
ছোটন হাঁসদা বলেন, আমাদেরও টানাটানির সংসার। কিন্তু একজন মানুষ বিপদে পরেছেন, তাঁকে তো আর ফেলে দিতে পারি না। একমাস ধরে যতটুকু পারছি করছি। সহৃদয় মানুষেরা এগিয়ে এলে ভালো হয়।