ধূপগুড়ি: বিয়েবাড়ি নয়, এ যেন রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্র। ছাদনাতলাকে সাক্ষী রেখে পাত্রীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে পাত্রের বাড়ির লোকজনের তুমুল লড়াই। শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতেই অস্বীকার করে বসল পাত্রী। ফলে শূন্য হাতেই ফিরতে হল পাত্রকে। ধূপগুড়ি (Dhupguri ) ব্লকের বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যবড়াগাড়ি এলাকার ঘটনা।
জানা গেছে, মধ্য বড়াগাড়ি এলাকার এক যুবতীর সাথে পাশের মাথাভাঙ্গা ব্লকের ফুলবাড়ির নবগঞ্জ এলাকা পাত্রের ৭ মাস আগে বিয়ে ঠিক হয়। ছেলে রীতিমত চাকরি করে। উভয় পরিবারই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে। সোমবার ছিল বিয়ের দিন। মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিল গ্রামের সকলে। খাওয়া দাওয়ার পর আমন্ত্রিত অতিথিরা চলে গেল রীতিমতো ধর্মীয় আচার মেনে বিয়েও হয়। অভিযোগ, সাত পাকে বাঁধার পর বাসি বিয়ের নিয়ম নিয়ে বচসা শুরু হয় পাত্র এবং পাত্রীর পক্ষের মধ্যে। আর সেই বচসা থেকে ক্রমে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। অভিযোগ, পাত্র পক্ষের লোকজন পাত্রীর বাড়ির লোকজনের উপর চাড়াও হয়, যার ফলে পাত্রীর মামা জখম হন।
যখন দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি চলছিল ঠিক সেসময় পাত্র আবার পাত্রীকে ঘাড়ে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি পাত্রীকে নিয়ে গিয়ে পাত্রপক্ষ দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় বলে দাবি পাত্রী পক্ষের। পরিস্থিতি এমন হয় যে এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে যান। এরপরই বিয়েতে বেঁকে বসেন পাত্রী। সাফ জানিয়ে দেন এই পরিবারে বিয়ে তিনি করবেন না। পাত্রীর কথাতে সায় দেয় পাত্রীর বাবা-মা থেকে আত্মীয় স্বজনরা। পাত্রীর সাফ বক্তব্য, ওরা মদ খেয়ে বিয়ে করতে এসে তাঁর আত্মীয় স্বজনকে মারধর করেছে। তাঁর দাবি বিয়ের দিনই যারা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে তাঁরা বিয়ের পর কি না করতে পারে। মেয়ে বিয়ে না করে ভালই করেছে বলে দাবি পাত্রীর মায়েরও।
তবে পাত্র জানান, কথা ছিল দুই রাতে দুই বিয়ে হবে, কিন্তু মেয়ে পক্ষ একই রাতে দুই বিয়ে দিচ্ছিল। তখন বাধা দেওয়ার জন্য পিছন থেকে কিছু লোক ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি পরিস্থিতি ঠান্ডা করতেই মেয়েকে ঘাড়ে করে তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলছিলেন। ভেবেছিলেন এভাবে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি ঠান্ডা হবে কিন্তূ পাত্রী পক্ষ অন্য ভাবে নিয়েছে। তবে মদ খেয়ে বিয়ে করতে আসার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। মঙ্গলবার ঘটনার কথা জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে আসে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। এলাকাবাসীরা পাত্র সহ চারজনকে আটকে রেখে ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়। পরবর্তীতে এলাকার প্রধান প্রতাপ মজুমদারের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের মধ্যে সালিশি সভা বসে। শেষে এলাকার লোকজন পাত্রকে ছেড়ে দেয়। এদিকে এক মাত্র মেয়ের বিয়েতে এই ঘটনা ঘটায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি পাত্রীর বাবা। তিনি জানালেন, ধার দেনা করে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। সবটাই মাটি হয়ে গেল। বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রতাপ মজুমদার বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে দুপক্ষের সন্মতিতে বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।