নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর ৫ আগস্ট অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এবার শুরু হল সেই মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ প্রথমেই অর্থ দিয়ে সূচনা করলেন। শুক্রবার রাম মন্দির নির্মাণের জন্য রাম মন্দির ট্রাস্টের হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহের কাজ চলবে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্বেচ্ছা সেবকরা সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ বা তাঁর বেশিও চাইলে এই ট্রাস্টে দান করতে পারবেন মানুষ। এর বদলে সকলকে কুপন দেওয়া হবে মন্দিরের তরফে।
এমনকি ২০০০ টাকার বেশি যারা দান করবেন তাঁদের জন্য থাকবে বিশেষ কুপন ব্যবস্থা। মিলবে আয়করেও ছাড়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাষ্ট্রীয় কার্যকারী অধ্যক্ষ আলোক কুমার জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির হাত দিয়েই রাম মন্দিরের টাকা সংগ্রহের কাজ শুরু হল। এরপর তাঁরা একে একে যাবেন সকলের কাছে। উপ রাষ্ট্রপতির কাছেও যাওয়া হবে। তারপর নরেন্দ্র মোদির কাছে যাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এই ট্রাস্টের সদস্যরা। এবং সেই অর্থ দিয়েই মন্দিরের কাজ এগোবে। ২০ হাজারের বেশি কেউ দান করতে চাইলে তা নেওয়া হবে চেকে। ৫ লক্ষ ২৫ হাজার গ্রামবাসীর কাছে পৌঁছে যাবে এই ট্রাস্ট।
পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। পূর্ব বর্ধমান সহ সারা বাংলা জুড়ে অর্থ সংগ্রহে নামল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ‘রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র অভিযান গোষ্ঠী’ শুক্রবার বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলার মন্দিরে পুজো দিয়ে অর্থ সংগ্রহ অভিযানের সূচনা করল। পুজো শেষে ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা এদিন সর্বমঙ্গলা মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ আলোচনা সভাও সারেন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত কর্তা তিতাস চৌধুরী জানান, ৫০০ বছর ধরে শ্রীরাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক ছিল। দীর্ঘদিন পর ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হিন্দু ভারতবাসীর তরফে জয় আসে। তারপর এবার তাই শুরু হল ’শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্রের’ জন্য ভারতবর্ষ জুড়ে অর্থ সংগ্রহ অভিযান।
অর্থ সংগ্রহ অভিযান শুরুর প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিতাস বাবু বলেন, শিল্পপতিদের বললে তারাই তৈরি করে দিতে পারতেন রাম মন্দির। সেটা হলে‘ রাম মন্দির’ না হয়ে তা ‘শিল্প মন্দিরে’ পরিণত হত। সেই কারণে ভারতবাসীর উদ্দেশ্য এই মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হল। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সকলের কাছে গিয়ে এই অর্থ সংগ্রহ করা হবে। আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়েই অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়া হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন ওই মন্দির গড়তে সমস্ত স্তরের মানুষের সাহায্য নেওয়া হবে। যার যতটুকু সামর্থ ততটাই তাঁরা সাহায্য করবেন। সেটাই সংগ্রহ করা হবে। কয়েকজন ধনীর কাছ থেকে শুধু অর্থ না নিয়ে তাঁরা ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছোতে চান। তার কারণেই এই অর্থ সংগ্রহ অভিযান বলে ‘রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র অভিযান গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, অর্থ সংগ্রহের জন্য ১০, ১০০ ও ১০০০ টাকার কুপন ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে তৈরি হয়ে বাংলায় চলে এসেছে।
পাশাপাশি, আসানসোলেও সেই কর্মসূচি শুরু হল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের তরফে আসানসোলের মহাবীর স্থানের বজরংবলী মন্দিরে প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু করা হয়। প্রথম দিনেই প্রায় লক্ষাধিক টাকা জমা পড়ে। আরএসএসের বিভাগ প্রচারক পরিতোষ সাহার নেতৃত্বে এই কর্মসূচি শুরু হয়। রাম মন্দির ট্রাস্টের জেলা মাতৃ শক্তি প্রধান সুদীপা গাঙ্গুলী বলেন, রাম মন্দির সম্পর্কিত আন্দোলন শুরু হয়েছে বহু বছর ধরে। বহু হিন্দু এই রাম মন্দির তৈরীর স্বার্থে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে আমরা সেই অংশীদারিত্ব গ্রহণ করেছি ও নিজেদের কে সমর্পণ করতে পেরেছি। নিধি বা শুল্ক সংগ্রহের যে অঙ্গীকার আমরা করেছি তা আমরা আজ থেকে শুরু করলাম। আসানসোলের সৃষ্টি নগরে প্রতি ফ্ল্যাটে গিয়ে আমরা সম্পর্ক স্থাপন করছি। নিধি সংগ্রহের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে রাম মন্দির স্থাপন প্রকল্পে অংশীদারিত্ব করছি। এদিন আমরা ভাল সহযোগিতা পেলাম। কারণ, এই মন্দির যদিও হিন্দুদের কিন্তু জাতপাতের ঊর্ধ্বে থেকে মন্দির প্রকল্পে সবাই দান করলেন। এদিন উপস্থিত ছিলেন তন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়, শিবকুমারী, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা রায়, সোমা গুহ, সুস্মিতা দাশগুপ্ত, সমীর ভৌমিক, মনোজ সাউ।