মেখলিগঞ্জ: কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ওপারে গোরু পাচারের রমরমা কারবারের কথা নতুন কিছু নয়। তবে গরু পাচারের চেষ্টার পাশাপাশি সীমান্ত থেকে গোরু-মহিষ উদ্ধার হবার পর সেগুলি নিয়েও বড় ধরণের কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে আসছে।
অভিযোগ, উদ্ধার হওয়া গোরু বিভিন্ন খোঁয়ারে রাখার পর সেই খোয়ার থেকে রাতারাতি সেইসব গোরু বাংলাদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে গোয়াল অর্থাৎ খোঁয়ার শূন্য কেরে সেই গোরু ওপারে পাচার করে দেওয়া হলেও কাগজে কলমে গোরু মিলিয়ে রাখা হচ্ছে। বড় গোরু ধরা পড়লে সেগুলি বাছুর হয়ে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন চলছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ তো রয়েছেই।
পাশাপাশি খোঁয়ারে রাখার পর মাঝেমধ্যেই প্রচুর গোরু মারা যাচ্ছে বলে দেখানো হচ্ছে। বাস্তবে যত গোরু খোঁয়ারে থাকার কথা আদৌ সেই সংখ্যক গোরু সীমান্তের খোঁয়ারগুলিতে নেই বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর এনিয়ে এবার অভিযোগ এনেছেন মেখলিগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা। তাদের সন্দেহ, এই গোরু উদ্ধারের পর খোয়ার, নিলাম এইসব প্রক্রিয়ার পিছনে একটা চক্র কাজ করছে। পুলিশ এবং প্রশাসনের একাংশও এর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ। ফলে এতে সরকারেরও প্রচুর রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে কয়েক কোটি টাকার গরমিল ধরা পড়তে পারে বলে তাদের সন্দেহ। গোরু পাচার নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসার পর মেখলিগঞ্জ ব্লকেও এনিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তাদের অনেকেই চাইছেন এই সীমান্তেও সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে গোরু পাচার চক্র নিয়ে বড় ধরণের রহস্য বেড়িয়ে আসতে পারে।
যদিও সূত্রের খবর, মেখলিগঞ্জ সীমান্তের গোরু পাচারের চেষ্টা, উদ্ধারের পর নিলাম প্রক্রিয়া কিভাবে হয়েছে কিংবা হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ পৌঁছেছে। গোয়েন্দা সংস্থাদের তরফেও এই সীমান্তের উপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে এমনকি খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে, মেখলিগঞ্জ সীমান্তের এইসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান জানিয়েছেন। বর্তমানে কত গরু খোঁয়ারে থাকার কথা এবং বাস্তবে কত রয়েছে। এইসব বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করে সঠিকতথ্য প্রকাশ্যে আনা হোক। এই দাবির কথা লিখিতভাবে সম্প্রতি ডাক মারফৎ জেলাশাসকসহ বিভিন্ন মহলে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।
মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিয়তি সরকার বলেন, ’গোরু নিয়ে দিনের পর দিন ভুড়িভুঁড়ি অভিযোগ ওঠে আসছে। যা দেখে অনেকসময় চক্ষু চড়ক গাছও হয়ে যাচ্ছে। গোরু উদ্ধারের পর অনেক গোরু মারা যাচ্ছে। এটাও ভাববার বিষয়। সরকারের রাজস্বও ক্ষতি হচ্ছে। সঠিক তথ্য উঠে আসার পাশাপাশি এর একটা বিহিত চাইছি। প্রতিদিন এনিয়ে বহু অভিযোগ আমার কাছে আসছে।‘
পঞ্চায়েত সমিতির প্রাণী কর্মাধক্ষ্য বাবুল হোসেন বলেন, ‘এনিয়ে যা হচ্ছে সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, চ্যাংরাবান্ধায় গত বছরের নভেম্বরে গোরুর নিলাম হয়েছিল। তারপর আর গোরুর মার্কিং এখানে হয়নি। প্রায় একবছর পর এরমধ্যে এখানে গোরুর মার্কিং করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন ১০৯টি গোরুর মধ্যে ৩৯টি গোরুই মারা গেছে। মৃত গোরুর সার্টিফিকেটও দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমিও একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। এইসব বিষয়ে জেলা প্রশাসনকেও অবগত করা হয়েছে। সঠিক তথ্য উদ্ধার ও এইসব রহস্যের উদঘাটন চাইছেন তিনি।’
মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ বাপী চক্রবর্তী বলেন, ‘সীমান্তের এই এলাকায় গোরু নিয়ে দিনের পর দিন যা চলছে সেটা অজানা নয় কারোরই। বড় গোরু বদলে ছোট করা, সঠিকভাবে নিলাম না করা ইত্যাদি অভিযোগের শেষ নেই। এইসব প্রশাসনের উচ্চকর্তাদেরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ।’