আসানসোলঃ প্রথমে আসানসোলের জেলা আদালতের আইনজীবি হিসাবে পরিচয়। তারপর ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে ফরেন লিকার সপের লাইসেন্স করে দেওয়ার প্রলোভন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আবগারি দপ্তর বা এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টের ভুয়ো পোর্টাল তৈরী করে আসানসোল পুরনিগমের শাসক দলের প্রাক্তন কাউন্সিলরের ছেলের সঙ্গে ৪২ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হল এক মহিলা। বৃহস্পতিবার রাতে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গড় থেকে পাপড়ি সুলতানা নামে ঐ মহিলাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের পুরনিয়া তলাওয়ের বাসিন্দা ধৃত পাপড়ি সুলতানা। অভিযোগ মহিলা আসানসোল পুরনিগমের বার্ণপুরের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর সরবন সাউয়ের ছেলে নরসিংবাঁধের ধ্রুপডাঙ্গার বাসিন্দা লব কুমার সাউকে ফাঁদে ফেলে। এই প্রতারণা চক্রে মহিলার সাথে আরো দুজন আছে বলে সাইবার সেলের এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলো পাপড়ির দিদি মানোয়ারা সুলতানা ও নবনীত ভারতী। পুলিশ ভাঙ্গড় থেকে পাপড়িকে গ্রেফতার করলেও, মানোয়ারা সুলতানা ও নবনীত ভারতী এখনও বেপাত্তা। পুলিশ তাদের খোঁজ করছে। ধৃত পাপড়ি সুলতানা নিজেকে রাজ্য আবগারি দপ্তরের আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে ফোনে লব কুমার সাউয়ের সঙ্গে কথা বলতো।
লব কুমার সাউয়ের আইনজীবী দিব্যেন্দু ঘোষ এদিন বলেন, আমার মক্কেলের বাবার একটি হিরাপুর থানায় মামলা ছিল। সেই সূত্রেই তার সঙ্গে পাপড়ি সুলতানার পরিচয় হয়। তখন সে নিজেকে আসানসোল জেলা আদালতে আইনজীবী বলে পরিচয়। বাবাকে এই মামলার নিষ্পত্তি করে দেওয়ার নাম করে তার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নেয় ঐ মহিলা। পরে ঐ মহিলা একটা ভুয়ো ওকালতনামাও জমা দেয়। এরপরই বিলাতি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে আমার মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু হয়।গত ৭ মে শেষ বার টাকা নেওয়ার সময় লব কুমার সাউয়ের সন্দেহ হয়। ততক্ষণে ধৃত মহিলা পাপড়ি সুলতানা প্রায় ২ বছরে নেট ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে কলকাতা, মুম্বাই ও আসানসোলের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। এরপর তিনি আবগারি দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে পোর্টালের মাধ্যমে তাকে মদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাও ভুয়ো। সঙ্গে সঙ্গে লব কুমার সাউ গোটা বিষয়টি জানিয়ে জুন মাসের প্রথম দিকে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের সাইবার সেলে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে একটি নোটিশ পাঠিয়ে পুলিশ পাপড়ি সুলতানাকে ডেকে জেরা করে পড়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। গোটা বিষয়টি তার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে ও যেকোন সময় গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কায় সে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করে। গত ১৭ জুন সেই আবেদনের শুনানিতে জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ জামিন না দিয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশকে পাপড়ি সুলতানাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় যেহেতু আবগারি দপ্তরের ভুয়ো পোর্টাল তৈরী করা হয়েছে, তাই ঐ দপ্তরকেও এই মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারক।
আদালতের নির্দেশ শোনামাত্রই পাপড়ি সুলতানা ফেরার হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙ্গড় থেকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধৃতকে আসানসোল জেলা আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে মহামান্য আদালত।ধৃতর বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৭১, ৪৬৮, ৪২০, ৪১০, ৪০৬ ও ১২০/বি নং ধারায় মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : স্বামীর সঙ্গে ঘর করতে চেয়ে শ্বশুর বাড়ির সামনে ধরনায় বসলেন স্ত্রী