নাগরাকাটা: রসুন আর ব্লিচিং এতেই কি লুকিয়ে আছে মৌমাছির হাত থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ! এর বিজ্ঞানসন্মত কোন ব্যাখা মেলে নি বটে। তবে ওই দাওয়াইকেই কাজে লাগিয়ে পিএইচই-র ৪০ ফুট গভীরতার জলাধারে টানা ৫ ঘন্টা ধরে আটকে থাকা ৫ জনকে উদ্ধার করে এখন নাগরাকাটার(Nagrakata) হিরো ৩ প্রবীণ। তাঁরা হলেন ভীম বাহাদুর ছেত্রী, দূর্গা ছেত্রী ও নীর বাহাদুর ছেত্রী।
মাটি থেকে ১০০ ফুটেরও বেশী উচ্চতার ৪৫ হাজার গ্যালন আয়তনের জলাধার পরিষ্কার করতে গিয়ে মঙ্গলবার প্রথমে মৌমাছির হুলবিদ্ধ হন ৪ সাফাই কর্মী। এরপর তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে ফের মৌমাছির হামলার শিকার হন খোদ এক দমকল আধিকারিক। উপায় না দেখে ৫ জনই ঢুকে পড়েন জলাধারের ভেতর। সেখানেও অবশ্য নিস্তার মেলে নি। জলাধারকে ঘিরে থাকা মোট ৯ টি চাকের মৌমাছির একাংশ জলাধারের ভেতরও ঢুকে পড়ে। আটকে থাকা ৫ জনকে মৌমাছির হাত থেকে বাঁচিয়ে উদ্ধারের উপায় খুঁজতে সেসময় প্রশাসন, পুলিশ কিংবা দমকল প্রত্যেকেরই শীতের নরম রোদ্দুরেও গলদঘর্ম দশা। ঠিক তখনই মুশকিল আসানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ওই ৩ ব্যক্তি। কাজটি তাঁরা পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রথমে সংশয়ে ছিলেন সরকারী কর্তারাও। তিনজনই প্রশাসনের কাছে দাবি করে বসেন কিছু রসুন আর ব্লিচিং পাউডার এনে দিতে হবে। সাথে কীটনাশক স্প্রে-র যন্ত্রও। সেই মোতাবেক তড়িঘড়ি সবকিছুই এনে দেওয়া হয়। প্রথমে ৩ জনই নিজেরা কিছু কাঁচা রসুন খেয়ে নেন। প্রশাসন-দমকলের দেওয়া সুরক্ষা বস্ত্রের ওপর ব্লিচিং পাওডার জলে মিশিয়ে ভালো মতো স্প্রে করে নিতেও দেখা যায় তাঁদের। এরপরই পিএইচই-র জলাধারের সিড়ি বেয়ে তরতর করে ওপরে উঠে পড়েন। বলাই বাহুল্য মৌমাছি কাউকে কিছু করে নি। এরপর জলাধারের ভেতর থেকে একে একে সবাই ওপরে উঠে আসলে সেখানেও প্রত্যেককে রসুন খাইয়ে দেন তাঁরা। তাঁদেরও সারা গায়ে ব্লিচিংয়ের দ্রবণ স্প্রে করে দেওয়া হয়। পরের কাহিনী নির্বিঘ্নে নেমে আসার পালা।
এই সাফল্যের ইউএসপি-র কথা জানাতে গিয়ে সহজ সরল ভীম বাহাদুর বলছেন, রসুন আর ব্লিচিংই মূল হাতিয়ার। মৌমাছি এতে কাছে ঘেঁষে না। নাগরাকাটা থানার আইসি কৌশিক কর্মকার বলছেন, উদ্ধারের কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ থাকলেও ওঁরা যেভাবে তা করেছেন তা অবাক করার মতনই বিষয়ই। দ্রুত প্রত্যেককে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অসিতাভ বসুও সারাদিন উদ্ধার কাজের তদারকিতে ছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, এমনটা আগে কখনো দেখিনি। হতে পারে রসুন ও ব্লিচিংয়ের গন্ধে মৌমাছি ধারে কাছে ঘেষে না। তবে আসল কারণ জানা নেই।