মালবাজার : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬২০০ ফুট উঁচু সুনতালে গ্রাম। ঝান্ডির কাছের গ্রামে পুজো করছিলেন ধুপগুড়ি থেকে আসা পুরোহিত প্রদীপ মিশ্র। পাশেই বসে সংকল্পে মগ্ন শুভম পোদ্দার। ঢাকের বোল তখন অনুরণিত হচ্ছিল পাহাড়ের খাদে। গ্রামবাসী মানেতা ছেত্রী, পাশাং দর্জি শেরপা, হিরন ছেত্রীরা তখন পুজো নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। এই প্রথম পুজো হচ্ছে গ্রামে। নাম দেওয়া হয়েছে স্বর্গে দুর্গাপুজো। আর তাড়িয়ে তাড়িয়ে পুজো উপভোগ করছেন গ্রামবাসীরা তো বটেই দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরাও। এবার পাহাড়ের পুজো টানছে পর্যটকদের পাশাপাশি একদিনের ট্যুরে আসা ভ্রমণার্থীদেরও।
ঝান্ডির কাছে সুনতালে গ্রামে স্থানীয় একটি হোমস্টে র কর্ণধার বিজয় কৃষ্ণ পোদ্দার, রিনা পোদ্দার, শুভম পোদ্দার প্রমুখ গোটা কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখছেন। মালবাজার থেকে মহাপঞ্চমীতেই প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঢাকিরা এসেছেন মুর্শিদাবাদ থেকে। রবিবার সকালে তিথি মেনেই স্থানীয় পাহাড়ি ঝর্ণার জলে কলা বউ স্নান করানো হয়। তারপর তা স্থাপন করা হয় মন্ডপে।
আয়োজকদের অন্যতম শুভম পোদ্দারের কথায়, ‘আমরা পূজোর কোনও আয়োজনই বাদ রাখছি না। পর্যটক ভ্রমণার্থীদের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা থাকছে। প্রতিদিন ধুনুচি নাচ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে।’ চেল নদীতেই বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন করা হবে। সাত অক্টোবর বিজয়া সম্মেলনীতে বিশিষ্ট শিল্পীরাও উপস্থিত থাকবেন। এদিকে শুধুমাত্র সুনতালে নয় পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকাতেই এবার ভাল সংখ্যায় পুজোর আয়োজন হয়েছে।
মানজিং গ্রামের বিক্রম পরাজুলি বলেন, ‘আমাদের গ্রামেও পুজো হচ্ছে। আমরা শুনেছি অনেকেই আমাদের গ্রামের পুজোয় এবার ঘুরতে আসবেন। আমরা অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য ব্যবস্থা রাখছি।’ মাল শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়া মোড়ের বাসিন্দা পরিমল দেবনাথ বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের পাদদেশেই বসবাস করি। পাহাড় আমাদের টানে। আমরা পূজোতে পাহাড়ে ঘুরতে যাবই।’ পাহাড়ে পর্যটকদেরও ভালো সমাগম রয়েছে। গরুবাথান পর্যটন উন্নয়ন সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা তুফান সুব্বা বলেন, ‘দুর্গা পূজার সময় থেকেই পাহাড়ে পর্যটক সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। আমরাও আশার আলো দেখছি।’ পাহাড় ঘুরতে আসা এক পর্যটক দেবপ্রিয়া সেনগুপ্ত বললেন, ‘পাহাড়ের এত উঁচুতেও দুর্গা পুজো দেখার সৌভাগ্য হবে ভাবতে পারিনি। রোমাঞ্চকর অনুভূতি হল।’
আরও পড়ুন : হরিশ্চন্দ্রপুরে নজর কাড়ল কেদারনাথের মন্দির, অষ্টমীতে জনপ্লাবন