বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ : রায়গঞ্জ মেডিকেলে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য দেখে খোদ মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের পর দুএকদিন পুলিশের তৎপরতা দেখা গেলেও লকডাউনে ফের পুলিশি উদাসীনতার ছবি ধরা পড়েছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। দালালচক্রের মূল পান্ডারা এখনও হাসপাতাল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালের কর্মী নন, কিন্তু এক প্রভাবশালীর ডানহাত বলে পরিচিত এক ব্যক্তি এখনও হাসপাতলে এসে সেবার নামে বিভিন্ন ধরনের দালালরাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি দালালরাজ থেকে মুক্ত হবে রায়গঞ্জ মেডিকেল? বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতাও খানিকটা থিতিয়ে গিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা। এখানে নিখরচায় পরিষেবা পাওয়ার কথা থাকলেও নানা কৌশলে অ্যাম্বুল্যান্সচালক থেকে আয়া, ট্রলিম্যান থেকে রোগী পরিষেবার নামে কিছু যুবক, বিভিন্ন কৌশলে রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। শিশু জন্মালে দুশো থেকে হাজার টাকা, জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিতে রোগীর পরিবারকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। কিছু মানুষ সরাসরি এই লেনদেনে জড়িত থাকলেও, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে। তাদের ওপর রয়েছে আরও প্রভাবশালী একজন।
ফলে সবকিছু দেখেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কর্মী, প্রশাসনের কেউই এই নিয়ে টুঁ শব্দ করে না। কেন দালালদের এই বাড়বাড়ন্ত? প্রতিদিন হাসপাতাল থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নানা কৌশলে আদায় করা হয়ে থাকে রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে। সেই টাকার কাটমানি পৌঁছে যায় প্রভাবশালীদের পকেটে। পুরসভার এক অস্থায়ী কর্মীর অভিযোগ, টাকা আদায়ের কাজ হাসপাতাল থেকে মনিটরিং করলেও কেউ টুঁ শব্দটি করার সাহস করেন না। হাসপাতালে এই তোলাবাজি চলতে থাকায় বারবার নেতা-মন্ত্রীরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ায়। কয়েক মাস আগে কালিয়াগঞ্জের একটি সভায় এসে তোলাবাজি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর একজন ট্রলিম্যানকে গ্রেপ্তার করা হলেও আসল অপরাধীরর টিকিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। এই তোলাবাজরা শুধু রোগীর পরিবারের কাছে তোলা আদায়ই নয়, অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর হামলা চলতে পারে। কয়েক মাস আগে এমন হুমকি ফোন পেয়ে শেষ পর্যন্ত ইস্তফা দিয়েছিলেন মেডিকেলের তৎকালীন সহকারী অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল সুপার সুরজিৎকুমার মুখার্জি। শুধু তোলাবাজি নয়, নিয়ম অনুয়ায়ী হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত আধা সেনা কর্মী নেওয়ার কথা। কিন্তু যারা কোনওদিন সেনাকর্মী ছিল না, তাদের নিয়োগ করেও সরকারি টাকার অপচয় করা হয়েছে।