রামকৃষ্ণ বর্মন, জামালদহ: উত্তরবঙ্গে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। অথচ, একসময় প্রতিটি চাষির ঘরে ঘরে নবান্ন উদযাপিত হত। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসজুড়ে কৃষকরা ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন। কিন্তু সময়ের ধারাপাতে আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে বংশপরম্পরায় চলে আসা নবান্ন উৎসব। আমন ধান কাটার পর সাধারণত কার্তিক মাসের শেষদিকে ফসল ঘরে তোলা হয়। এরপর সেই নতুন ধান থেকে প্রথম যে চাল পাওয়া যায়, তা দিয়েই সারা অগ্রহায়ণ মাসজুড়ে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। প্রথম ধান থেকে প্রস্তুত করা চালের রান্না করা খাবার পুজা-অর্চনা করে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-পরিজনদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়।
বছর কয়েক আগেও কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের জামালদহ, উছলপুকুরি, রানিরহাট সহ নানা এলাকায় নবান্ন উৎসব বেশ সমাদৃত ছিল। বর্তমানে আধুনিক ধ্যানধারণা ও ব্যস্ততার কারণে নবান্ন উৎসবের কদর অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেভাবে আর নবান্ন পালিত হয় না। তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় আজও স্বমহিমায় উদযাপিত হয় নবান্নের অনুষ্ঠান। বুধবার বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জামালদহের শালবাড়ি এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরিবারের লোকজনেরা নবান্ন উৎসবে মেতে উঠেছেন। ওই এলাকার বাসিন্দা ধনঞ্জয় রায়, পঞ্চানন রায় প্রমুখ জানিয়েছেন, আজও তাঁরা নিয়ম-নিষ্ঠা সহকারে নবান্ন উৎসব পালন করেন। আবহমানকাল ধরে তাঁদের পরিবারে এই উৎসব উৎযাপিত হয়। প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পরিবাবের কাছ থেকে পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করেন। সেইকারণে নবান্নে নতুন ধানের প্রথম রান্না করা খাবার পূর্বপুরুষের উদ্দেশে দেওয়া হয়।