ওদলাবাড়ি: প্রতিবেশী বাংলাদেশে পাথর রপ্তানির কাজে জড়িত এক লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যবসায়ীকে বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃনমূলের (TMC) মাল গ্রামীন ব্লক কমিটির সভাপতি সুশীল কুমার প্রসাদ ওরফে বাবুয়ার বিরুদ্ধে। ওই ব্যবসায়ী এবং সুশীল কুমার প্রসাদের টেলিফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ( যদিও অডিও ক্লিপের সত্যতা উত্তরবঙ্গ সংবাদ যাচাই করে নি) ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দুপক্ষের উত্তেজিত কথাবার্তার সেই অডিও ক্লিপে শঙ্কর দাস নামে ফুলবাড়ির বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীকে বাবুয়া প্রসাদ জুতোপেটা করবেন বলে শোনা গিয়েছে। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনায় তার বিরোধী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন সুশীল কুমার প্রসাদ।
ঘটনার সূত্রপাত ডামডিম স্টেশনে রেলের রেক পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের বিরোল, চিলাহাটি এবং রোহনপুরে বিভিন্ন আকারের ভাঙা পাথর রপ্তানির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। জানা গিয়েছে যে কলকাতার একটি সংস্থার পক্ষে ফুলবাড়ির বাসিন্দা শঙ্কর দাস নামে এক ব্যবসায়ী ওদলাবাড়ির তিনটি ক্রাশার থেকে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের চাহিদা মতো বিভিন্ন সাইজের ভাঙা পাথর ক্রয় করে রেলের ওয়াগনে চাপিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি করার কাজে গত প্রায় দু বছর ধরে জড়িত। প্রতি মাসে অন্তত দু তিনবার কখনও ৪২টি আবার কখনও ৫৯ টি ওয়াগন বোঝাই পাথর বাংলাদেশে পাড়ি দেয়। শঙ্কর দাসের অভিযোগ, প্রতিবার পাথর রপ্তানির আগে ডামডিমের বাসিন্দা এবং তৃনমূলের মাল গ্রামীণ ব্লক কমিটির সভাপতি সুশীল কুমার প্রসাদ ওরফে বাবুয়াকে বিপুল পরিমাণ কাটমানি দিতে হয়। পাশাপাশি অভিযোগ, যে কিছুদিন আগে পর্যন্ত সরাসরি ক্রাশারগুলো থেকে পাথর কিনে রপ্তানির কারবার চললেও ইদানিং ব্লক সভাপতি পদে আসীন হওয়ার পর বাবুয়া প্রসাদের অনুমতি ছাড়া সংস্থাটি সরাসরি ওদলাবাড়ির ক্রাশারগুলো থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ভাঙা পাথর কিনতে পারছে না। বাবুয়া প্রসাদের মাধ্যমেই কিনতে হচ্ছে। যার ফলে পণ্যের ক্রয় খরচ বেড়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে হুমকির বিষয়টি নিয়ে শঙ্কর দাস নামে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘মায়ের অসুস্থতার কারনে সময়মতো ক্রাশারগুলোতে পেমেন্টের টাকা পৌঁছাতে পারিনি। দিন দুয়েক দেরি হয়েছিলো। সেই পাওনা টাকা আদায়ের জন্য সুশীল কুমার প্রসাদ গতকাল রাতে ফোন করে আমাকে জুতোপেটা করবেন বলে হুমকি দেন। বিষয়টিতে মানসম্মানের প্রশ্ন জড়িয়ে যাওয়ায় সত্যিই জুতোপেটা করেন কিনা তা দেখার উদ্দেশ্যে রাতেই টাকা নিয়ে প্রথমে ওদলাবাড়ির ক্রাশারে এবং পরে ডামডিমের রেক পয়েন্টে পৌঁছে পাওনাদারদের মিটিয়ে দিই। এই সময় সংস্থার এক কর্মীকে বাবুয়া প্রসাদের সঙ্গী কয়েকজন যুবক শারীরিকভাবে নিগৃহীত করেন। এখানেই শেষ নয়, অত রাতে ডামডিমে আমাকে বাবুয়া প্রসাদের চোখ রাঙানির শিকারও হতে হয়েছে। শঙ্করের বক্তব্য,পুরো ঘটনা কলকাতায় তৃনমূলের সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে।’
যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ অভিযুক্ত সুশীল কুমার প্রসাদ। তার সাফ কথা,‘শঙ্কর বাবু কথা দিয়েও সময়মতো পেমেন্ট করেন নি। এদিকে পাওনাদাররা আমাকে বিরক্ত করে তুলছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তেজনার বশে জুতোপেটা করবো বলাতেই পাওনার পুরো কয়েক লক্ষ টাকা আদায় হয়েছে।’ এর বাইরে প্রতিমাসে ডামডিম থেকে বাংলাদেশে পাথর রপ্তানির আগে বিপুল পরিমাণ কাটমানি আদায়ের অভিযোগও সম্পুর্ন মিথ্যা বলে জানিয়েছেন সুশীল কুমার প্রসাদ। বিষয়টি নিয়ে দলের একাংশের দিকে অভিযোগের ইঙ্গিতও তিনি।
এ প্রসঙ্গে তৃনমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, ‘অডিও ক্লিপে কোনও কিছু প্রমান হয় না। ওই ব্যবসায়ী দলের কাছে অভিযোগ জানালে বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে একশ্রেণির ব্যবসায়ী তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তৃনমূলের দলীয় নেতৃত্বকে ব্যবহার করছেন। এর ফলে দলীয় সংগঠনের কোনও ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।’
আরও পড়ুন : দু-দল ছাত্রের মধ্যে হাতাহাতি, উত্তেজনা তুফানগঞ্জ কলেজে