শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : এ যেন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার দশা। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে নিয়োগ নিয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির অভিযোগ। দিন যতই বাড়ছে ততই সামনে আসছে একের পর এক দুর্নীতি। এবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচার্স কাউন্সিলের সভাপতি এবং তৃণমূলের অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার নেতা সমরকুমার বিশ্বাসের পদোন্নতি এবং স্ত্রীর চাকরি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠল। আর তা নিয়ে লিখিত অভিযোগ গেল মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee ) বিশেষ সুপারিশে দুই উপাচার্যের তত্ত্বাবধানেই তৃণমূল অধ্যাপক নেতার স্ত্রীর চাকরি হয়েছে বলেই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে তদন্তের দাবিতে সোমবারই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অধ্যাপক, আধিকারিকের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে।
শুধু সমর বিশ্বাসই নয়, উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক প্রাক্তন উপাচার্যের ছেলে ও মেয়ের একইসঙ্গে কলেজে অধ্যাপনার চাকরি নিয়ে অভিযোগ গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। ওই উপাচার্য পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেই অভিযোগ। তাঁর মেয়ে শিলিগুড়ির একটি কলেজে এবং ছেলে ফালাকাটার একটি কলেজে কয়েক বছর আগেই চাকরি পেয়েছেন। অভিযোগ, পিএইচডি ছাড়াই ছেলের চাকরি হয়েছে। অন্যদিকে মেয়ে পিএইচডির সুপারভাইজার ছিলেন তৃণমূলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কলকাতার এক অধ্যাপক। দুই চাকরির ক্ষেত্রেই পার্থবাবুর অতি ঘনিষ্ঠ এক উপাচার্যের হাত রয়েছে বলেই অভিযোগ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
যাবতীয় অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছেন সমরবাবু। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা অভিযোগ তুলেছেন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার থেকে আমার স্ত্রীর যোগ্যতা অনেক বেশি। সিএসসির মাধ্যমেই স্ত্রী চাকরি পেয়েছেন। যদি দুর্নীতি হয় তাহলে বলতে হবে সিএসসিতেই দুর্নীতি হয়েছে। আর যোগ্যতা ছিল বলেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন। তাতে কোনও দোষ নেই। যদি কেউ তদন্ত চেয়ে থাকেন তাহলে তদন্ত হোক। তদন্ত হলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অভিযোগপত্রের সঙ্গে বেশ কিছু নথিপত্রও পাঠানো হয়েছে বলেই খবর। সমরের স্ত্রী শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যাপক। পার্থবাবুর আমলেই তাঁর চাকরি হয়েছে। তিনি আবার উত্তরবঙ্গের বর্তমান এক উপাচার্যের অধীনেই গবেষণা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষক বলেন, অধ্যাপক নেতার স্ত্রী একজন উপাচার্যের অধীনে গবেষণা করছেন। তারপর তড়িঘড়ি চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির কাছেই কলেজে পোস্টিং পাচ্ছেন। কারা ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন আর ওই নেতার স্ত্রী ছাড়াও যোগ্যতাসম্পন্ন আর কোনও প্রার্থী ছিলেন কি না সেই নথি যাচাই করলেই দুর্নীতি কীভাবে ও কতটা হয়েছে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। আরেক শিক্ষক বলেন, সমরবাবুর স্ত্রী উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক পদে কিছুদিন আগে আবেদন করেছিলেন। ফের ফুড টেকনলজি বিভাগে আবেদন করেছেন। কলেজ থেকে এখন স্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার চেষ্টা করছেন। আমরা সমস্ত তথ্য শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি।
কিছুদিন আগেই সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হয়েছেন সমরবাবু। ক্যারিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট স্কিমে (ক্যাস) তাঁর পদোন্নতি হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট সেল (আইকোয়াক)-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউজিসির নিয়ম অনুসারে প্রকাশনার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট নম্বর পান শিক্ষকরা। ইউসিজির কনসর্টিয়াম অফ অ্যাকাডেমিক রিসার্চ অ্যান্ড এথিকস (কেয়ার)-এ প্রকাশিত নিবন্ধকেই নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহযোগী অধ্যাপক থাকাকালীন কতগুলি প্রকাশনা রয়েছে সেটার ভিত্তিতেই নম্বর পাওয়ার কথা সমরবাবুর। কিন্তু সেই পদ্ধতি না মেনেই শাসকদলের নেতা হওয়ার দরুন নিজের প্রভাব খাটিয়ে আইকোয়াককে ব্যবহার করে তিনি প্রকাশনার নম্বর বাড়িয়ে নিয়েছেন বলেই মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে অভিযোগ তোলা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে।
ওয়েবকুপার রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু বলেন, সমর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য। তবে ঠিক কী হয়েছে সেটা সংগঠনের উত্তরবঙ্গের নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। তাঁদের কাছে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করব। বিষয়টি নিয়ে জানতে সংগঠনের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের আহ্বায়ক জিনিয়া মিত্রকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন তোলেননি।
আরও পড়ুন : হাতির হানায় লন্ডভন্ড প্রাথমিক স্কুল