বক্সিরহাট: অসম লাগোয়া প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতি রাতে অশ্লীল নাচ-গানের আড়ালে বসছে জুয়ার আসর। এদিকে জুয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছেন এলাকার তরুণরা। উচ্চগ্রামে মাইকের আওয়াজে এলাকার পড়ুয়াদের লেখাপড়া লাটে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক মহলে বোঝাপড়া থাকায় নাচ-গানের আড়ালে এই জুয়ার আসর বসাচ্ছে অসাধুচক্রের দল। তুফানগঞ্জ-২ (Tufanganj) ব্লকের পূর্ব ফলিমারি গ্রামের খামারপাড়া এলাকার ঘটনা।
বক্সিরহাট থানার (Bakshirhat police station) তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রায়ডাক ও সংকোশ নদীবেষ্টিত গ্রাম পূর্ব ফলিমারি। নদী ও অসম সীমানা গ্রামটিকে ব্লক ও জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই গ্রামে। নদীপথে ও সড়কপথে অসমের দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে ব্লকের বাকি অংশের সঙ্গে এই গ্রামের বাসিন্দাদের যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রত্যন্ত এই এলাকায় প্রতি বছর এই সময় স্থানীয় ও অসমের কিছু তরুণ অশ্লীল নাচ-গান ও যাত্রার আসর বসান এলাকায়। অভিযোগ, এর আড়ালে রমরমিয়ে চলে জুয়ার আসর। সেই আসরে দু’রাজ্যের মানুষই শামিল হন।
খামারপাড়া নদী সংলগ্ন জায়গায় মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই সেখানে শুরু হয়ে যায় অশ্লীল নাচের আসর। উচ্চগ্রামে মাইক বাজানো হয়। চিত্রহারের আকর্ষণে সন্ধ্যা নামতে এলাকার সব বয়সের মানুষ ভিড় জমান। তাঁদের মধ্যেই অনেকেই জুয়া খেলাতেও অংশ নেন। এদিকে উচ্চগ্রামে মাইক বাজানোয় পড়ুয়াদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। আবার জুয়া খেলে অনেকে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এতে অনেক পরিবারে অশান্তি শুরু হয়েছে। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখান না। প্রতিবাদ করলেই মিলছে হুমকি।
স্থানীয় এক তরুণের মা জানান, প্রতিদিন তাঁর ছেলে অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজ করেন। যা রোজগার করেন সন্ধে হলেই জুয়া খেলেই সব শেষ করে দেন। ফলে তাঁদের সংসারে অনটন লেগে রয়েছে।
শাসকদলের মদতেই বসছে জুয়ার আসর, অভিযোগ বিজেপির (BJP)। এ ব্যাপারে বিজেপির তুফানগঞ্জ ৪ নম্বর মণ্ডল সভাপতি গৌতম দাস বলেন, ‘শাসকদলের নেতাদের মদতেই খামারপাড়া, পূর্ব ফলিমারি এলাকায় বসছে জুয়ার আসর। ফলে সেখানে অভিযান চালাতে সাহস দেখায় না প্রশাসন।’ যদিও বিজেপির তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল (TMC)। তুফানগঞ্জ-২ ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি নিরঞ্জন সরকারের বক্তব্য, ‘এসবের মধ্যে তৃণমূলের কেউ জড়িত নন। ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে বিজেপি। প্রশাসনকে বলব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।’
এ ব্যাপারে বক্সিরহাট থানার পুলিশ জানিয়েছে, এলাকাটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অসম হয়ে সেখানে পৌঁছোতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার উপর সময় লাগে। ফলে খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছানোর আগেই আয়োজকরা সবকিছু গুটিয়ে সেখান থেকে অসমে পালিয়ে যায়। এসব বন্ধে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে তারা ফের উদ্যোগ নেবে বলে জানায়।