শুভঙ্কর চক্রবর্তী, বাণেশ্বর : লকডাউনের জেরে ভক্তদের জন্য বন্ধ হয়েছে মন্দিরের দরজা। ফলে জুটছে না বাড়তি ভোগ। তাই পেটে টান পড়েছে বাণেশ্বরের মোহনদের। নিত্যপুজোর ভোগের ৬ কেজি সাদা ভাতেই দিন কাটছে চারশোর বেশি কচ্ছপের।
কোচবিহার জেলার বাণেশ্বরে কচ্ছপদের আলাদা গুরুত্ব আছে। এখানে কচ্ছপদের পোশাকি নাম মোহন। স্থানীয় মানুষ তাদের দেবতাজ্ঞানে পুজো করেন। উত্তরবঙ্গে পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র বাণেশ্বর শিবমন্দির। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রত্যেক বছরই বহু ভক্ত এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। আর মন্দিরের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু মোহনের দল। নাটমন্দির লাগোয়া বিশাল পুকুরই মোহনদের বাসস্থান। মোহনদের নিয়ে নানা গল্প আছে। রাজ আমলের ওই মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড। সরকারি নির্দেশ মেনে ভক্তদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মন্দিরের দরজা। তবে নিয়ম মেনে চালু রয়েছে নিত্যপুজো।
নিত্যপুজোর জন্য প্রতিদিন মন্দিরে ৬ কেজি চালের ভাত ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়। সেই ভোগের পুরোটাই পুকুরে দিয়ে দেওয়া হয় মোহনদের খাবারের জন্য। এছাড়া ভক্তরা যে ভোগ দেন তারও সবটাই মোহনদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অন্য সময় ভক্তদের ভোগ মিলিয়ে দিনে গড়ে ১২ কেজি ভাত মোহনদের খাওয়ার জন্য দেওযা হত। লকডাউনের জেরে ভক্তরা এখন পুজো দিতে পারছেন না। ফলে মোহনদের কপালে জুটছে সেই ৬ কেজি ভাত।
মন্দিরের পুকুরে চারশোরও বেশি কচ্ছপ আছে। শীতকালে বা ভরা বর্ষায় বরাদ্দ ৬ কেজি চালের ভাতেই পেট ভরে মোহনদের। তবে ফাল্গুন মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চার মাস ৬ কেজির বরাদ্দ মোহনদের জন্য যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন মন্দিরের পুরোহিত এবং কেয়ারটেকার অচিন্ত্য ঠাকুর। তিনি বলেন, এই চার মাস মোহনদের প্রচুর খাবার দরকার হয়। এখন ভক্তরাও নেই। তাই এই সময় খাবারের পরিমাণ বাড়ালে ভালো হয়।
মোহনদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ সমীক্ষা করেছিল একটি বিদেশি সংস্থা। সেই সময় ওই সংস্থার বিশেষজ্ঞরা মোহনদের রক্ষায় নানা পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছিলেন। পুকুরে মোহনদের খাদ্যের স্বাভাবিক জোগানের জন্য পদ্ম ছাড়া কেঁচো এবং শামুক চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পুকুরের বিভিন্ন অংশে যাতে সারাবছর কাদা জমে থাকে তার ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। অভিযোগ, সেসব কিছুই করা হয়নি। তাই ভোগের প্রসাদই মোহনদের খাবারের অন্যতম উৎস। মোহনদের নিযে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, ভরা বর্ষায় পুকুরে স্বাভাবিকভাবেই কিছু খাবার তৈরি হয়। ওই সময়ে ছোট ছোট মাছের সংখ্যাও বাড়ে। তাই ৬ কেজি চালের ভাত সেই সমযে জন্য যথেষ্ট। আবার শীতের সময় মোহনের দল মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। অন্য সময়ে তুলনায় তখন ওরা অনেকটাই কম খায়। মোহনদের খাদ্যের চাহিদা থাকে মূলত চার মাস। আর এই সংকটের সমযে লকডাউনে ভক্তদের দেওযা বাড়তি খাবারও বন্ধ। তাই দ্রুত মোহনদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলেই মনে করছেন ওই কর্তা। ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য এবং কোচবিহার সদর মহকুমা শাসক সঞ্জয় পাল বলেন, আমরা বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। যদি সত্যিই মোহনরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার না পেয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা বরাদ্দ বাড়িযে দেব। তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।