শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : লকডাউনের জেরে ভ্যাকসিন অমিল থাকায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হ্যাচারিতে হাঁস-মুরগির টিকাকরণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে মড়কের আশঙ্কায় চিন্তিত ব্যবসায়ী এবং হ্যাচারি মালিকরা। হাঁস-মুরগি রোগে আক্রান্ত হলে তার ডিম বা মাংস মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
লকডাউনের জেরে বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার হাঁস, মুরগির হ্যাচারি মালিকরা। সরকারি হ্যাচারি ছাড়াও উত্তরবঙ্গজুড়ে ছোট-বড় একশোটিরও বেশি হ্যাচারি আছে। এছাড়াও গ্রামীণ স্তরে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী হাঁস, মুরগির বাচ্চা পালন করে। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে অল্প পরিমাণে মুরগিছানা পালন করেন। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর জানিয়েছে, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার ২১ দিনের মধ্যেই হাঁস, মুরগির বাচ্চাকে প্রথম টিকা দিতে হয়। এরপর যতদিন সেটি বেঁচে থাকবে ততদিনে পর্যায়ক্রমে এক মাস অন্তর অন্তর টিকাকরণ করাতে হয়। পদ্ধতি মেনে টিকাকরণ না হলে হাঁস, মুরগির নানা রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হ্যাচারি মালিকরা নিজেদের উদ্যোগে টিকাকরণের ব্যবস্থা করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাণীমিত্ররা হ্যাচারিতে গিয়ে টিকা দেন। অনেকে আবার প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সহযোগিতায় সরকারি উদ্যোগে টিকা দেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বিনামূল্যে হাঁস, মুরগির বাচ্চা দেওয়া হয়। টিকাকরণ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। প্রাণী চিকিৎসক প্রদ্যুৎ সিনহা জানিয়েছেন, সঠিক সময়ে টিকা না দিলে হাঁস ও মুরগির কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ওই ধরনের কলেরা অত্যন্ত সংক্রামক হওযায় খুব অল্প সময়ে মধ্যেই মড়ক শুরু হতে পারে।
নকশালবাড়ির একটি হ্যাচারি মালিক গৌতম রায় বলেন, কোথাও ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব ওষুধের দোকান থেকে আগে ভ্যাকসিন আনতাম তারা বলছে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিন না থাকায় এখনও টিকাকরণ করাতে পারছি না। আগের অনেক বাচ্চা আছে। এখন প্রতি সপ্তাহেই অল্প পরিমাণে বাচ্চা উত্পাদন হচ্ছে। তাই চিন্তায় আছি। রায়গঞ্জের একটি হ্যাচারি মালিক বিধান দাস বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে ভ্যাকসিন না দেওয়ায় একদিনের মধ্যে আমার ফার্মের প্রায় তিন হাজার হাঁস, মুরগির বাচ্চা মরে যায়। তাই চিন্তা বাড়ছে। হ্যাচারিতে হাঁস, মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মাথাভাঙ্গার সতীশ ক্লাব। তাদের নিজস্ব হ্যাচারিও আছে। ক্লাবের সম্পাদক অমল রায় বলেন, যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ করেও আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি না। লকডাউন শুরুর দিকে খুবই সামান্য পরিমাণে ভ্যাকসিন মিলছিল। এখন তাও পাওয়া যাচ্ছে না। টিকাকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে আছে। এরপর মড়ক লাগলে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের শিলিগুড়ির ডেপুটি ডিরেক্টর মিলন হালদার বলেন, হ্যাচারি থাকলে হাঁস-মুরগির টিকাকরণ করতেই হবে। সরকারিভাবে সেই বিষয়ে হ্যাচারি মালিকদের বলা আছে।
বিষয়টি নিয়ে মাংস বা ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিত্সকরা। দিনহাটা হাসপাতালের চিকিৎসক অজয় মণ্ডল বলেন, ভ্যাকসিন দেওযা হোক বা না হোক যদি হাঁস, মুরগি সুস্থ থাকে তাহলে তার ডিম বা মাংস খেলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে হাঁস-মুরগি যদি রোগগ্রস্ত হয় তাহলে সেই মাংস বা ডিম খেলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।