কল্লোল মজুমদার, মালদা : প্রথম কালবৈশাখীর ঝড়-বৃষ্টিতে জল জমেছিল জাতীয় সড়কে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও নিকাশিনালার অভাবে রাস্তা থেকে সেই জল নামেনি এখনও। বৃষ্টির জলের সঙ্গে নর্দমার জল মিলেমিশে একাকার। জাতীয় সড়কে জমে থাকা নোংরা জলের পাশেই বৃহস্পতিবার বসল সবজি বাজার। নোংরা জল আর থিকথিকে কাঁদার পাশেই বাজার বসায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জনমানসে।
প্রসঙ্গত, মালদা শহরের সবচাইতে বড়ো সবজি বাজার বসে নেতাজি মার্কেটে। কিন্তু করোনার জেরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সেই বাজার তুলে নিয়ে আসা হয় জাতীয় সড়কের ধারে। যে বাজারে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণে বিক্রেতা যেমন সবজি বিক্রি করতে বসেন, তেমনই হাজারো মানুষ আসেন বাজার করতে। এই বাজারে এতটাই ভিড় হয় যে লকডাউনের প্রথমদিকে ভিড় নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়েছিল পুলিশকে। হিমসিম খেতে হয়েছিল প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বণিক সভার নেতৃত্বকে। কিছুতেই যেন কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বাজারের ওপর। প্রতিদিনই সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওই বাজারে লকডাউন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
প্রথমদিকে লকডাউন মানাতে প্রশাসনিক কর্তারা কিছুটা তৎপরতা দেখালেও এখন হাল ছেড়ে দিযেছেন তাঁরা। শুধুমাত্র দু-চারজন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হচ্ছে। অভিযোগ, লকডাউন ভাঙতে দেখেও তাঁরা কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিভিক ভলান্টিয়ার জানান, বাজারে আসা মানুষ কিছুতেই আমাদের কথা শুনছে না। গাদাগাদি করে বাজারে সবজি কিনছেন। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। তবু আমরা চেষ্টা করছি। বাজারের প্রবেশ মুখে এবং একেবারে শেষে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। যাতে ক্রেতারা বাইক, সাইকেল নিয়ে বাজারে ঢুকতে না পারেন। তাতে কিছুটা হলেও ভিড় কম হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, রথবাড়ি এলাকার চারলেনের জাতীয় সড়কের একটি অংশে, যেখানে বাজার বসে, সেখানে বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশেছে নর্দমার জল। মিশছে পচা সবজি। এই নিয়ে বাজারে আসা ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক ক্রেতা সুনির্মল বসু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই মুহূর্তে করোনার আতঙ্ক রয়েছে শহরে। পুরসভা শহরের রাস্তাগুলি ফিনাইল দিয়ে দূষণমুক্ত করছে। অথচ এই বাজারের অবস্থা শোচনীয়। নোংরা জলের পাশেই বসছে বাজার। যা থেকে দূষণ যেমন ছড়াচ্ছে, তেমনই করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবিলম্বে বাজার চত্বর পরিষ্কার করতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মিনতি দত্ত নামে এক গৃহবধূর অভিযোগ, শহর পরিষ্কার করার কোনও হেলদোল নেই পুরসভার। রথবাড়ি সবজি বাজারে বৃষ্টির জল, নর্দমার জল মিলেমিশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিছু মানুষ এই বাজারে আসছেন প্রতিদিন। কিন্তু সরকারের নির্দেশ মেনে অনেকেই এখনও মাস্ক ব্যবহার করছেন না। ফলে বাজার করতে আসা মানে আতঙ্কের মুখোমুখি হওয়া। পুলিশ-প্রশাসনের এই ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। একই সঙ্গে বাজার পরিষ্কার করে দূষণমুক্ত করা উচিত পুরসভার।