সানি সরকার শিলিগুড়ি : বিপদের মুখে পাহাড়। গ্রামীণ পর্যটনে যতই জোয়ার আসছে, ততই যেন অশনিসংকেত স্পষ্ট হচ্ছে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের আকাশে। গ্রামীণ এলাকায় বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় স্টুরিস্ট স্পটগুলি কার্যত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটনে রাশ না টানলে ভূবিষ্যতে ভযংকর বিপদ আসতে চলেছে বলে আশঙ্কিত ভূবিজ্ঞানী থেকে বনকর্তারা।
হিমালয় নিয়ে কাজ করা ভূবিজ্ঞানী এস দেবনাথ বলেন, আবহাওয়ার কারণে পাহাড়ে সবকিছু সহজে নষ্ট হয় না। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি অনেক ক্ষেত্রেই বরফের ওপর প্লাস্টিক জমে রয়েছে। যার জেরে স্তরীভবন নষ্ট হচ্ছে। ভূমি দূষণ যেমন বাড়ছে, তেমনই মাটিতে মিশছে বিষ। ক্ষতির মুখে পড়ছে বন্যপ্রাণ। এমনটা চলতে থাকলে ভয়ংকর বিপদের মুখে পড়বে পাহাড়ি অঞ্চল। বন দপ্তরের কালিম্পংয়ের ডিএফও চিত্রক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় যেদিকে পরিস্থিতি গড়াচ্ছে, তাতে বন এবং বন্যপ্রাণ রক্ষা করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। কিছুদিন আগে বনের মধ্যে আবর্জনা ফেলার সময় তাঁরা দুটি গাড়ি আটক করেন বলেও তিনি জানান।
সময়ে সঙ্গে পাহাড়েও পালটে যাচ্ছে পর্যটনের সংজ্ঞা। একটা সময় শহরকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্রগুলি প্রথম পছন্দ ছিল পর্যটকদের। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত এলাকাগুলিকেও অফবিট ডেস্টিনেশন হিসেবে বেছে নিচ্ছেন পর্যটকরা। কোভিডের জেরে এই এলাকাগুলির কদর বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। ফলে এই এলাকাগুলিতে গড়ে উঠছে একের পর এক হোমস্টে। কিন্তু পাহাড়ে গ্রামীণ এলাকায় বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে পর্যটকদের ব্যবহৃত যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেট থেকে প্লাস্টিকের বোতল, অপচনশীল যাবতীয় জিনিস ঝোরায় পর্যন্ত ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি বন দপ্তরের তরফে কালিম্পংয়ের বনাঞ্চলে সাফাই অভিযান চালানো হয়। এই অভিযান থেকে কয়েক ট্রাক বর্জ্য পাওয়া গিয়েছে বলে বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে বনকর্তারা জানতে পারেন, রাতের অন্ধকারে বনের ভিতর, ঝোরা এবং নির্জন এলাকাগুলিতে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আবর্জনাবোঝাই দুটি ট্রাক আটক করা হয়।
সিটং, মংপু, গরুবাথান, আলগাড়া, রিশপ, ঝান্ডির মতো জায়গাগুলির অনেক জায়গায় পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে আবর্জনার স্তূপ জমছে। পাহাড়ের আবর্জনা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংগঠন উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু কোভিডের জেরে প্রায় দুবছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, নতুন করে কাজ শুরু প্রয়োজন। তবে যাঁরা পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। না হলে কিন্তু ভূমিধস বৃদ্ধি পাবে। চরম ক্ষতির মুখে পড়বে পাহাড়। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, এটা বড় সমস্যা। সমাধানের রাস্তা বের করার জন্য হোমস্টে, হোটেল এবং গ্রামসভাকে নিয়ে সমন্বয় গড়ে তোলা প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসনের।