রাজু হালদার, গঙ্গারামপুর : একসময় সারাবছরই জলে পরিপূর্ণ থাকত পুনর্ভবা নদী। আর সেই জলেই ভেসে বেড়াত অসংখ্য নদীয়ালি মাছ। এই মাছের উপর নির্ভর করে সংসার চলত পুনর্ভবা নদী লাগোয়া কালীতলা, বাঁধমোড়, বোড়ডাঙ্গি, নয়াবাজার, পূর্ব হালদারপাড়া, পশ্চিম হালদারপাড়া, কেশবপুর, হামজাপুর সহ একাধিক এলাকার মানুষের। কিন্তু গত ১০-১৫ বছর ধরেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে সেই ছবিটা। সামান্য গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জল শুকোতে থাকে নদীর। আর এবছরও একই দশা। চৈত্র মাস পড়তেই এবার পুনর্ভবা নদীর জলশূন্যতা চরম আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই কমেছে মাছেদের আনাগোনা। তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের পেশাগত পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এলাকার অধিকাংশ মত্স্যজীবীই। কিন্তু অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি বিকল্প কোনও পেশা বেছে নেওয়া। তার ওপর এই লকডাউনের মাঝে পড়ে তীব্র জীবিকা সংকটে ভুগছেন মানুষগুলি।
এ প্রসঙ্গে বাঁধমোড়ের বাসিন্দা পেশায় মত্স্যজীবী দ্বিজেন সরকার জানান, ওপার বাংলা থেকে ভারতবর্ষে আসার পর থেকেই পুনর্ভবা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে বর্ষার দুতিন মাস পর থেকেই আর প্রায় সারা বছর নদীতে তেমন জল থাকে না। ফলে সেভাবে দেখা পাওয়া যায় না নদীয়ালি মাছেরও। এখন খুব কষ্টে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সারাবছরই নানা কাজের খোঁজে আমরা অপেক্ষায় থাকি।
কেশবপুরের বাসিন্দা আরেক মত্স্যজীবী অজিত হালদার বলেন, পুনর্ভবা নদীতে একসময় প্রায় সারাবছর ধরেই জল থাকত। তখন আমরা মাছ ধরেই সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন বছরের অধিকাংশ সময়ই নদী মরুভমিতে পরিণত হযে থাকে। প্রায় সিংহভাগ নদীতে জল থাকে না। ফলে নদীয়ালি মাছও ক্রমশ লুপ্ত হওয়ার পথে। সংকটজনক এই পরিস্থিতিতে আমাদের চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমরা বাধ্য হচ্ছি নিজেদের পেশা বদল করতে।
এই বিষয়ে পরিবেশপ্রেমী তুহিনশুভ্র মণ্ডল জানান, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অন্যতম নদী হিসেবে পুনর্ভবা নদী সুপরিচিত। পুনর্ভবা নদী মূলত মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। এককালের পূর্ণগর্ভা পুনর্ভবা নদীর জল বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিশেষত বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় দুই নম্বর ফরাক্কা বাঁধ ইউনিয়নে রবার ড্যাম তৈরি করে পুনর্ভবা নদীর জল সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যার ফলে পুনর্ভবা নদী প্রায় সারাবছর ধরেই জল সংকটে ভুগছে। এর পাশাপাশি চাষের কাজে এর আগে এই নদী থেকে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে জল তুলে নেওয়া হয়েছে। যার ফলে বর্তমানে জলশূন্যতার মতো এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়ে পড়েছে নদীর মত্স্য বৈচিত্র্য। যার ফলে এই মুহূর্তে চরম সংকটে পড়েছেন নদীনির্ভর মত্স্যজীবীরা।