কোচবিহার : সারাদেশে লকডাউনের জেরে মাথায় হাত কোচবিহার জেলার বিভিন্ন নদীর চরের কয়েকশো তরমুজচাষির। খেতে তরমুজ পোক্ত হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের জন্য আসছেন না ভিনরাজ্যের পাইকাররা। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণের জালে জড়াতে হবে কোচবিহার জেলার মানসাই, তোর্ষা, কালজানি ইত্যাদি নদীর চরের তরমুজচাষিদের।
নদীভাঙনে নিশিগঞ্জের সোনাতলি, শীতলকুচি পূর্ব ভোগডাবরি, পূর্ব কুর্শামারি, চান্দামারি, পুঁটিমারি ফুলেশ্বরী এলাকার মানসাই নদীর বিস্তীর্ণ চরে এখন সবুজের সমারোহ। সারাবছর চর ধু-ধু করলেও এই সময় সবুজ লতায় ফলেছে রসালো তরমুজ। চরে বালি খুঁড়ে জল বের করে সেই জল দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তরমুজ ফলান চাষিরা। নিশিগঞ্জ সংলগ্ন মানসাই নদীর চরে ফলানো তরমুজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় শিলিগুড়ির আড়তে। সেখান থেকে ভিনরাজ্যে যায় তরমুজ।
করোনা আতঙ্কের মধ্যেই পোক্ত হতে শুরু করেছে তরমুজ। কিন্তু যানবাহনের অভাবে বাজারে নেওয়া যাচ্ছে না। বাইরের পাইকাররাও আসছেন না। পূর্ব কুর্শামারি গ্রামের তরমুজচাষি সন্তোষ মণ্ডল বলেন, এবার প্রায় দশ হাজার তরমুজ গাছ লাগিয়েছি। প্রায় দুমাস শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়েছি। ঋণ নিয়ে সার কিনেছি। কিন্তু করোনার জন্য তরমুজ শিলিগুড়ি পাঠাতে পারছি না। পূর্ব ভোগডাবরি গ্রামের তরমুজচাষি পরিমল রায় বলেন, আর দশদিনের মধ্যে তরমুজ বাজারে না নিতে পারলে প্রচণ্ড ক্ষতি হবে।
অপর এক তরমুজচাষি বলেন, এক সময় মানসাই নদীর ভাঙনে সব কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে যায়। এখন সেই নদীর যেখানে চর পড়েছে সেখানে তরমুজ চাষ করি। এই তরমুজ চাষের উপর সারাবছর সংসার চলে আমাদের। পাইকাররা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তরমুজ নিতে চাইছেন না। এই ফল ঘরে রাখা যায় না। চরম বিপদে পড়েছি। তোর্ষার চরের অপর এক তরমুজচাষি বলেন, চড়া সুদে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে প্রায় ১৫ বিঘা নদীর চরে তরমুজ চাষ করেছি। এই একমাস ফলন উঠবে। কিন্তু লকডাউন না উঠলে পথে বসতে হবে। অপর চাষি রতন মণ্ডল বলেন, প্রশাসন ট্রাক চলাচল স্বাভাবিক করলে তরমুজ বাজারে নিতে পারতাম। তা না পারায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা।
মাথাভাঙ্গার মানসাই নদীর চরের তরমুজচাষি গোপাল দাস, সাগর দাস, অনিল দাস, লক্ষ্মণ দাস, মনু মণ্ডল, দীননাথ চৌধুরীদের মতো মহকুমার সব তরমুজচাষি করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি চাষের খরচ না ওঠার আশঙ্কা ও আতঙ্কে ভুগছেন। অনিলবাবু বলেন, গত বছরের মতো এবার ৬ হাজার তরমুজের চারা লাগিয়েছি। গত বছর খরচ হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ টাকা। তরমুজ বেচে আয় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। লকডাউনের জন্য এবার আমরা তরমুজ বিক্রি করতে পারছি না। প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছি। শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না।
সমস্যায় পড়েছেন পারডুবির তরমুজচাষিরাও। পারডুবির তরমুজচাষি সুভাষ বর্মন, ওমপ্রকাশ চৌধুরী, সোমনাথ চৌধুরী প্রমুখ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। মাথাভাঙ্গা মহকুমার তরমুজচাষিদের সমস্যায় উদ্বিগ্ন তণমূল কংগ্রেস নেতা বিশ্বজিৎ রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি প্রশাসন এবং এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের সঙ্গে আলোচনা করব। এ প্রসঙ্গে বিনয়বাবু বলেন, মাথাভাঙ্গা সহ জেলার তরমুজচাষিদের বিষয়টি নিয়ে মার্কেটিং বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করব। লকডাউনের কারণে ভরা মরশুমে চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করতে না পারায় উদ্বিগ্ন কোচবিহার জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক বিপ্লব সরকার। তিনি বলেন, তরমুজ বাজারে না পাঠাতে পেরে চাষিরা উদ্বগে আছেন। বিষয়টি নিয়ে মার্কেটিং বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করব। দ্রুত বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে তরমুজচাষিদের বড় ক্ষতি হবে।