প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বছরে দু’বার মহার্ঘ ভাতা দেবে না রাজ্য সরকার। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে(Supreme Court) এই মর্মেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করল রাজ্য সরকার। এই প্রসঙ্গেই রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির দাবি, ইতিমধ্যেই ১২৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করেছে রাজ্য সরকার। আর কোনও মহার্ঘ ভাতা বকেয়া নেই। তারপরেও ৩ লক্ষ ১৯ হাজার রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশের দাবি, যা কার্যত অনৈতিক। তা মেনে প্রতি বছর দু’বার মহার্ঘ ভাতা দিতে গেলে রাজ্যের ঘাড়ে ৪১,৭৭০ কোটি টাকার বিশাল বোঝা চাপবে। যা একেবারেই কাম্য নয়।
সোমবার শীর্ষ আদালতে ডিএ মামলার শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এহেন যুক্তি শুনে বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী এবং বিচারপতি ঋষিকেষ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়, ‘আমরা এখনই এ নিয়ে কোনও অন্তবর্তী আদেশ দিচ্ছি না। তবে আপনাদের আবেদন অবশ্যই বিবেচনা করব। একইসঙ্গে ডিএ-র বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। এই মর্মে সব পক্ষের বিস্তারিত বক্তব্যও শোনা হবে।’ এরপরেই শীর্ষ আদালতের তরফে নোটিশ জারি করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। হলফনামা সহ সব পক্ষের বক্তব্য জমার পরে ১৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে হবে মামলার পরবর্তী শুনানি। এর মধ্যে মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত দুটি আদালত অবমাননার শুনানি হবার কথা ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের শুনানি স্থগিত রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স বা মহার্ঘ ভাতা ইস্যুতে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এদিন সেই মামলারই শুনানিতে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে প্রথমেই সিংভি দাবি করেন, রাজ্য সরকার তাদের কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে না। এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। তাঁর বক্তব্য, ‘২ শতাংশ থেকে শুরু করে ১২৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মীদের একাংশের তরফে এখন দাবি তোলা হচ্ছে, পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে বছরে দু’বার আমাদের ডিএ দেওয়া হোক। এই সুপারিশ রাজ্য মানে না। বছরে দু’বার ডিএ দেওয়ার দাবি বৈধ নয়। মনে রাখতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করা পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ কিন্তু কোনও আইন নয়। এই মর্মে কোনও বিধিও তৈরি হয়নি।’
অভিষেক সিংভির দাবি খন্ডন করে মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজ্যের দাবি এ ক্ষেত্রে অযৌক্তিক। কারণ, বেতন কমিশন নয়, অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স হিসেবে ডিএ দেবার কথা বলা হয়েছে। বছরে দু’বার বা তিনবার ডিএ দিতে হবে, সেকথা বলেনি হাইকোর্ট।’ একই যুক্তি পেশ করেন কর্মী সংগঠনের তরফে সওয়াল করা প্রবীণ আইনজীবী মীনাক্ষি অরোরা। তাঁর যুক্তি, ‘সারা ভারতের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় সরকারি হারে ডিএ দেবার কথা বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই সূচক বছরে দু’বার পরিবর্তিত হয়। স্বভাবতই বছরে দু’বার ডিএ প্রদানের দাবি উঠছে।’ উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে দুই বিচারপতি জানান, তাঁরা এখনই কোনও অন্তবর্তী আদেশ দিচ্ছেন না। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের উপরে কোনও স্থগিতাদেশও জারি করা হচ্ছে না। শীর্ষ আদালতের তরফে জারি নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে হলফনামা সহ সব পক্ষের মতামত শোনার পরে ১৪ ডিসেম্বর হবে মামলার পরবর্তী শুনানি।
আরও পড়ুনঃ সাতসকালে কেঁপে উঠল পুরীর মাটি, সৈকত শহরে প্রবল আতঙ্ক