মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: উন্মাদনা, উচ্ছ্বলতা, অশ্রুসিক্ত আর গুণগতমানে সেরা এক উন্নত উচ্চতার ফুটবল ছিল এই একমাসের বিশ্বকাপে(WorldCup)। কি ছিলো না সেখানে! যেমন ধারাভাষ্যকার, তেমনই খেলা, তেমনই রেফারির সমন্বয়, ম্যাচ অন্তে অর্থ পরিমাণ, পারিবারিক ধারবাহিকতা, দর্শক সাপোর্ট; সবমিলিয়ে ককটেল, ঝাঁঝ ও মিষ্টতা সমানভাবে সমানমাপে। তবে ‘পাশেআছি’র বার্তা দিতে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট যেভাবে এমবাপের মাথা চেপে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন বারবার, এটা যেকোন সময়ের ইতিহাসে বিরল ঘটনাবাহুল্যের মধ্যে একটি। বিজয়ীর পাশে তো সবাই থাকে,বিজিতের পাশে থাকার মধ্যে যে কলজে লাগে সেটি দেখতে বারবার দৃশ্য পুনরাবৃত্তি করেও যেন আশ মেটেনা। যারা ফুটবল বোঝেন না, ভালোবাসেন না, দেখতেও চান না, তাদের জন্য উপহার থাকলো এটি। ঘাসে প্রায় বসে পড়ে কিলিয়ান এমবাপেকে ভেঙে না পড়ার পরামর্শই দিচ্ছিলেন সম্ভবতঃ ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ।
হয়তো তিনি বলছিলেন তুমি সেরা, নইলে পেনাল্টি শুটআউট পর্যন্ত টানা যেতনা, অনবদ্য তিন গোলের জন্য গোল্ডেন বুট তোমার, ২০২৬ এ বুঝিয়ে দিও ঐ সোনার কাপ তোমার জন্যই নির্দিষ্ট -নির্মিত। হাসিহীন মুখে বুট নেওয়া, একবারও স্মারকের দিকে চোখ না ফেরানো, ব্যাক টু ব্যাক দুটো গোল, একস্ট্রা টাইমে আবারো জালে বল সব মিলিয়ে কালকে দুটো দল যে টানটান উত্তেজনা উপভোগ করার জন্য আটকে রাখলো ৮-৮০কে টিভির পর্দায় ২০২৬ পর্যন্ত তা অক্সিজেন দেবে আমাদের, কিন্তু ভারতের সুধী দর্শক, আর কতদিন অন্যদেশের, অন্যকারোর জন্য আমরা নিবেদিতপ্রাণ থাকবো বলতে পারেন ? কেন এত্তো জনবহুল একটা তৃতীয় বিশ্বের দেশে একটা বিশ্বমানের ফুটবল দল নেই? বলবেন মহিলা -পুরুষ জাতীয় দল তো আছে, নিশ্চয়ই আছে, আর মহিলা দলের গোলরক্ষক অদিতি চৌহান হিন্দী কমেন্ট্রিও করেছেন দারুণ, কিন্তু কথায় কি চিঁড়ে ভেজে দাদা! আবারো আমার কথাকে কেটে আপনি বলবেন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এরপরে বিশ্বকাপে ভারতও সামিল হবে, কবে ? যবে আমি আপনি পরপারে প্রপার্টি কিনে বাস করবো? হেরে গেলে আমাদের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী এভাবেই মাঠে বসে খেলা দেখে উৎসাহিত করে কান্নায় আটকে যাওয়া মুখকে বুকে চেপে সান্ত্বনা দিতে পারবেন! পারবেন না, কারণ তাদের মন নেই, অর্থের প্রাচুর্য্যের জেল্লায় চোখ ধাঁধিয়ে তাঁরা শুধুই ব্যবসা করতে জানেন, বক্তৃতায় ভরাতে জানেন, বাড়ীর একজন হতে পারেন না।
আমাদের ক্রিকেট টিম হেরে গেলে কি অনায়াসে হাসিমুখে তারা করমর্দন করেন বিপক্ষের সঙ্গে, জানি বলবেন এটা স্পোর্টসম্যানশিপ, পরের দিনের খবরের কাগজে বড় বড় করে হৃদয়ভঙ্গের খবর সঙ্গে আগামীদিনের ললিপপ চুষিয়ে ছেড়ে দেন কিন্তু এইভাবে মনে দাগ কাটেন না যাতে মনে হয় এই একটা কাপ অধরা থাকলে জীবনই শেষ। অথচ ফ্রান্স কিন্তু গতবারের চ্যাম্পিয়ন, এমবাপের তাতে বড় ভূমিকা ছিল, তাহলে কি হল ! একজন খেলোয়াড় ও তার সঙ্গীরা ৩৬ বছর পর এই জয়ের স্বাদ পেলেন, দিলেনই নাহয় তাদের এবছরের মতো ছাড়, বয়স কম, স্কিল বেশি, দুর্দান্ত চাতুরী ও বুদ্ধিমত্তার মিশেল দিয়ে আগামীবার জিতে নেওয়াই যাবে বিশ্বকাপ। যুক্তি তো অনেক বোঝে কে ! বোঝেনা কারণ মনপ্রাণ দিয়ে চাওয়াতে যখন খাদ থাকেনা তখনই বোধহয় এমবাপের মত মন খারাপ হয়। আর যাদের কিছুই থাকেনা তারা অন্যের জন্য গলাফাটায়, সময় নষ্ট করে রাত জেগে খেলা দেখে, ঝিমঝিমে অবস্থায় অফিস করে, আবারো টিভির সামনে বসে পড়ে লাগাতার। আচ্ছে দিন আর যুবশ্রী তো অনেক হলো মাননীয়দ্বয়, পকেট না ভরে এবার একটা ফুটবল টিম বানান দেখি। শুধু ক্রিকেট দিয়ে যে আর চলছেনা।
“সব খেলার সেরা বাঙালীর তুমি ফুটবল” বা “ঝুন্ড” যদি আপনাকে চিন্তায় ফেলে, যদি ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করে থাকেন, যদি স্বামী বিবেকানন্দের বাণীতে আস্থা থাকে তাহলে অবশ্যই বিশ্ব ফুটবলের ময়দানে ‘জনগণমন’ শোনা যাবে একদিন এই আশাতেই রয়েছি আপামর ভারতবাসী। তবে এইকাজেও কি করতে হবে আন্দোলন, ঝরবে রক্ত কিংবা অর্থ? জানা নেই। এখানেও কি অন্যান্য খেলার মতো কাটমানি আর প্রভাবশালীদের রমরমা বাজার থাকবে ? জানা নেই। যে ছেলেটা/ মেয়েটা একপেট খিদে আর দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে ছুটছে বল পায়ে তাদেরকে সঠিক পথনির্দেশ করবে কে ? জানা নেই। শুধু জানা আছে দেশনেতার অঙ্গুলিনির্দেশ এইবারে ফুটবলের ওপর আর শোনামাত্রই জপমালায় জপছি আমরা জপমন্ত্র — ‘আমরা করবো জয় নিশ্চয়’।
লেটেস্ট খবর জানার জন্য দেখুন www.uttarbangasambad.com এবং ব্রেকিং নিউজ (Breaking News) এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন উত্তরবঙ্গ সংবাদ টিভিতে ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Instagram পেজ ।
আরও পড়ুন: মারাদোনা-মেসিকে নিয়ে গান বাঁধলেন প্রাক্তন এই ফুটবলার, মন জুড়োল বাঙালির