এটিকে মোহনবাগান – ৩ (উইলিয়ামস ৩)
ঢাকা আবাহনী – ১ (ড্যানিয়েল)
কলকাতা : প্রয়াত ঋতুপর্ন ঘোষের ১৯ এপ্রিল সিনেমায় ছিল সম্পর্কের ভাঙ্গাগড়ার গল্প। সেই ১৯ এপ্রিলে দাঁড়িয়ে এদিনের ম্যাচ বা এই এএফসি কাপটাই যেন এটিকে মোহনবাগান ফুটবল দলের সঙ্গে সমর্থকদের সম্পর্কের এক নতুন সমীকরন।
আগের ম্যাচের থেকেও এদিন গ্যালারিতে দর্শকসংখ্যা (৩২ হাজার) আরও বেশি। সঙ্গে আন্দোলনের তীব্রতাও। যেন ওঁরা বলতে চাইলেন, এই দলটা, এই রঙটা আমাদের। সবসময় এঁদের পাশে আছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্যায়টা মেনে নেব। এতো সংসারেরই আর এক চিত্র। তাই খেলতে গিয়ে যে দর্শক সুবিধা পেলেন প্রীতম কোটালরা সেটাই হয়ত অনেক আগে থেকেই তাঁদের এগিয়ে রেখেছিল।
যার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো রেস্তর অভাব ছিল ঢাকা আবাহনীর। এই আবাহনীর সঙ্গে মোহনবাগানের প্রতিদ্বন্দ্বীতা বহু পুরনো। মোহনবাগান যদি এদেশের ফুটবল ঐতিহ্যের প্রধান পথিকৃত হয় তাহলে পিছিয়ে নেই আবাহনীও। তবে দেশের ফুটবল গতিপ্রকৃতির সঙ্গে তাল রেখেই সেই লড়াইয়ে এগিয়ে সবুজ মেরুন। শেষবার ২০১৭ সালে এএফসি কাপে দুই দলের দেখা হয় রবীন্দ্র সরোবরে। সেই ম্যাচ সঞ্জয় সেনের দল জিতেছিল ৩-১ গোলে। এবারও সেই একই ফল।
প্রথম একাদশে দুটো স্বাভাবিক পরিবর্তন হওয়ার কথাই ছিল। আর্শ আনোয়ারের জায়গায় অমরিন্দার সিং ও কিয়ান নাসিরির বদলে লিস্টন কোলাসো। স্বাভাবিকভাবেই এতে যেমন নিজেদের অর্ধ বাড়তি নিরাপদ হয় তেমনি আক্রমনেও ঝাঁঝ বাড়ে। ৬ মিনিটে গোলটা এল একেবারে কপিবুক স্টাইলে। হুগো বৌমাস থেকে লিস্টনের থ্রু ধরতে জনি কাউকো যেভাবে ছিটকে বেরোলেন তাতেই সম্ভবত গোলটা নিশ্চিত হয়ে যায়। তাঁর ক্রস থেকে উইলিয়ামস শুধু বলটা জালে ঠেলে গোলটা নিশ্চিত করেন।
২৯ মিনিটে করা দ্বিতীয় গোলটা একেবারেই আবাহনী ডিফেন্ডার টুটুল বাদশা ও সাহিদুল আলমের ভুল বোঝাবুঝিতে। প্রবীর ডানদিক থেকে যে বলটা তোলেন সেটা টুটুলের সামনে ড্রপ করে পরার পরেও না তিনি ক্লিয়ার করলেন না। সাহিদুল এগিয়ে এলেও উইলিয়ামসের কোনও অসুবিধাই হল না গোলে বলটা রাখতে। প্রথমার্ধেই তিনি হ্যাটট্রিক করে ফেলেন যদি না বৌমাসের দেওয়া থ্রু ধরে ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে পারলেন না, গোলরক্ষককে কাটাতে না পারায়।
গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন কাউকো এবং লিস্টনের শট বাঁচান সাহিদুল। পরিবর্ত কিয়ান নাসিরির অসাধারন একক দৌড়ের পর গোলে বল রাখতে পা পারাটা মন খারাপ করে দেবে বাগান সমর্থকদের। তবে তাঁদের নিশ্চিন্ত করে ৮৫ মিনিটে উইলিয়ামস তাঁর হ্যাটট্রিক এবং দলের জয় নিশ্চিত করেন।
আবাহনী দলটার মধ্যে গভীরতা একেবারেই নেই। অবশ্যই শ্রীলঙ্কার ব্লু স্টারের মতো অতটাও খারাপ নয়। কিন্তু দলটার বড়ো সমস্যা হল, বিদেশি। রাফায়েল অগস্তোই হোন কী বাকি তিন বিদেশি ড্যানিয়েল সোলেরা, মিলাদ সোলেমানি বা নেদো তুর্কোভিচরা কেউই দারুন ছন্দে নেই। তবু কোচ মারিও লেমোস দলটাকে রক্ষনাত্মক খেলাননি।
যার ফল বিরতির পরেই পেল তারা। ৬১ মিনিটে বক্সের মাথায় দাঁড়িয়ে ড্যানিয়েলের চিপ করে তোলা বল অমরিন্দারের মাথা টপকে গোলে ঢোকে। তার আগে ৪৭ মিনিটে নেওয়া ড্যানিয়েয়ের শটটা গোলে ঢোকার মুখে অমরিন্দার বারের উপর দিয়ে না ওড়ালে ম্যাচের রঙ আগেই বদলে যেতে পারত।
এদিন বিরতির পরে এটিকে মোহনবাগানের খেলা হুয়ান ফেরান্দোর কপালে ভাঁজ ফেলবেই। আগামী ১৮ মে থেকে এই যুবভারতীতেই তাদের মোকাবিলা করতে হবে অনেকবেশি শক্তিশালী মাজিয়া স্পোর্টস, বসুন্ধরা আর গোকুলাম কেরালার। তার আগে যাবতীয় রোগ সারানো জরুরি।