গঙ্গারামপুরঃ উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন এক চালকল শ্রমিক। গঙ্গারামপুর ব্লকের ফুলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই কৃতী ছাত্রের নাম জার্জিজ আলি। ছিলনা কোনও গৃহশিক্ষক। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে জার্জিজের সাফল্যে গর্বিত স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে গোটা গ্রাম। অর্থাভাবে কি করে এখন সে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পরিবার। জার্জিজের লক্ষ্য ভবিষ্যতে সরকারি উচ্চপদে চাকরি করা।
গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের ধোপাদিঘি বিরানই গ্রামের বাসিন্দা রিয়াজউদ্দিন মিয়াঁ। পেশায় তিনি চালকল মিলের শ্রমিক। স্ত্রী জেলেখা বিবি গৃহবধূ। চার ছেলে মেয়ের সংসারে রিয়াজউদ্দিন একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। বহুকষ্টে কিছুদিন আগে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। রিয়াজউদ্দিনের ছোট ছেলে জার্জিজ আলি। আর্থিক অনটনের সংসারে বাবাকে সাহায্য করতে জার্জিজ তাঁর বাবার সঙ্গে চালকল মিলে শ্রমিকের কাজে যোগ দেয়। শ্রমিকের কাজ করার পাশাপাশি জার্জিজ লেখাপড়া চালিয়ে যায় সমানতালে। এবছর সে ফুলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। ফল প্রকাশ হতেই দেখা যায় ৯৬.৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলে পেছনে ফেলে সে বিদ্যালয় সেরা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সকলকে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। জার্জিজের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৩। সে বাংলায় ৯৪, ইংরাজীতে ৯৬, ভূগোলে ৯৭, দর্শনে ১০০ ও পরিবেশবিদ্যায় ৯৬ নম্বর পেয়েছে। মাত্র ৬ নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় স্থান না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন প্রতিবেশী ও শিক্ষকরা। তবে তাঁর স্বপ্ন সরকারি আধিকারিক হওয়া। কিন্ত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আর্থিক সংকট বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে সরকারি সাহায্যের দাবি উঠেছে সর্বস্তরে।
জার্জিজ আলি বলেন, “বাবা চালকল মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। সেজন্য কোনও গৃহশিক্ষক নিতে পারিনি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও সিনিযার দাদাদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সংসারে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য বাবার সঙ্গে চালকলে শ্রমিকের কাজ করি। ডব্লিউবিসিএস পড়ে সরকারি আধিকারিক হবার ইচ্ছে রয়েছে। কিন্তু লেখাপড়া করানোর মত আমার বাবার সামর্থ নেই। কিভাবে স্বপ্নপূরণ করব সেই চিন্তায় রাতে আমার ঘুম আসছে না। যদি একটু সরকারি বা অন্য কোনওভাবে আর্থিক সাহায্য পেতাম তাহলে লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারতাম।”
জার্জিজের মা জেলেখা বিবি বলেন, অন্যদের মতো ছেলেকে গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। গৃহশিক্ষক ছাড়াই এবার ফুলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে চালকলেও কাজ করতে যেত। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন ছেলেকে যদি গৃহশিক্ষক দিতে পারতাম তাহলে হয়তো মেধা তালিকায় নাম থাকত জার্জিজের। পাশাপাশি তিনি বলেন ছেলেকে কী করে কলেজে ভর্তি করব সেটাই এখন সমস্যার।
প্রতিবেশি আব্দাস আলি মিয়াঁ বলেন, “ছোট থেকে ছেলেটি লেখাপড়ায় খুব ভালো। তাদের সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো নয়। জার্জিসের বাবা চালকলে কাজ করে লেখাপড়া করাচ্ছে। সেও চালকলে কাজ করতে যেত। আমরা ভাবতে পারিনি চালকলে কাজ করেও সে এত ভাল ফল করবে। পাশাপাশি তিনি বলেন জার্জিসের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে তাঁরা গর্বিত। তবে মেধা তালিকায় থাকলে আরো বেশি খুশি হতাম।”
ফুলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, বিগত দিনে জার্জিজের লেখাপড়ার জন্য আমরা যতটা পেয়েছি সাহায্য করেছি। আগামীদিনে জার্জিজের লেখাপড়ার জন্য আমরা শিক্ষক শিক্ষিকারা যতটা পারব সাহায্য করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি তিনি বলেন, কোন সংস্থা বা সরকারিভাবে জার্জিজ সাহায্য পেলে আরও ভালোভাবে সে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে।
আরও পড়ুনঃ Coochbehar | উচ্চমাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল, বিডিও হওয়ার স্বপ্ন দিনহাটার বাপ্পির