নয়াদিল্লি : পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য নতুন নয়। দাম্পত্য সম্পর্কে পুরুষ উপার্জন করবে, আর নারীর দাযিত্ব সংসার প্রতিপালন। যার মধ্যে স্বামী, সন্তানের যাবতীয় সুবিধা-অসুবিধার দেখভালও অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও ভারতীয় সমাজ এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভারতকে দোষ দিযে লাভ নেই, ইউরোপ-আমেরিকার মতো তথাকথিত উদারপন্থী উন্নত সমাজেও লিঙ্গ বৈষম্য বিরল নয়। এ দেশে নিত্যদিন বাস, ট্রেন, অফিস, নিরাপত্তাবাহিনীতে লিঙ্গগত কারণে ভেদাভেদের অভিযোগ সামনে আসে। এর মধ্যে কোনওটি আমাদের মনকে নাড়া দেয়, কিছু আবার রাশিকৃত খবরের তলায় চাপা পড়ে যায়। ২০২০-তে ভারতে লিঙ্গবৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত সামরিক বাহিনীর ১০টি শাখায় মহিলাদের দায়িত্ব প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সামরিক বাহিনীর আলাদা মর্যাদা রয়েছে। সেখানে নারীদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে তাঁদের ক্ষমতায়নের প্রতিফলন ঘটায়। যদিও এটা সত্যি যে, সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও বহুদিন যাবৎ ভারতীয় সেনায় মহিলারা গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদেরই একজন স্নেহা চৌধুরী। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া স্নেহা কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় বহুদিন কাজ করেছেন। সীমান্ত সংঘাত, হামলা, পালটা হামলা দেখেছেন কাছ থেকে। এমন একটি জায়গায় পোস্টিং পাওয়া

তাঁর কাছে নারীত্বের ক্ষমতায়ন। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় ভারতের নানা প্রান্তে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন স্নেহা। পরে দিল্লির কাছে গ্রেটার নয়ডার আইটিএস ইঞ্জিনিযারিং কলেজ থেকে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিযারিংযে স্নাতক হন। ২০১৪ সালে সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার পর প্রথম পোস্টিংই ছিল জম্মুর আখনুর সীমান্ত এলাকা.। স্নেহা বললেন, সীমান্ত এলাকা. সেনাবাহিনীর পাহারা, তাঁদের জীবন আগে শুধুমাত্র সিনেমা. দেখেছিলাম। সত্যি সত্যি সীমান্ত এলাকা. থাকা, কাজ করা আমার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। আমার আত্মবিশ্বাস, দেশের স্বার্থে কাজ করার উত্সাহ এই অভিজ্ঞতার ফলে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের আর এক উদাহরণ মাধুরী কানিতকার। তিনি সম্প্রতি মেজর জেনারেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন। তাঁর পদোন্নতি সেনায় কর্মরত মহিলা আধিকারিকদের প্রেরণা জোগাচ্ছে। দেশরক্ষা হোক বা সংসার সামলানো, দক্ষতাই শেষ কথা। যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে লিঙ্গ নয়, যোগ্যতাই যে প্রধান মাপকাঠি, ওপরের উদাহরণগুলি সেদিকে ইঙ্গিত করে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে অসংখ্য অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রার আযোজন হবে। নারী স্বাধীনতা, সমানাধিকার, লিঙ্গভেদ নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা চলবে সারাদিন। প্রশ্ন উঠবে, ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হওয়ার দৌড়ে শামিল হযে কেন আমরা লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছি? এ নিয়ে ক্ষোভ-দুঃখের বহিঃপ্রকাশও ঘটবে ইতিউতি। এর পরেও হয়তো রাজনীতি, বহুস্তরীয় জনপ্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা, সমাজ-সংসারে নারীদের বঞ্চনা নিযে বিতর্ক চলতে থাকবে। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই বৈষম্য দূর করার দায়িত্বটা কিন্তু শুধু পুরুষতন্ত্রের নয়, অর্ধেক আকাশকেও তার অধিকার বুঝে নিতে হবে।