রায়গঞ্জ: গৃহবধূ সুপ্রিয়া দত্ত খুনের ঘটনার পাঁচদিনের মাথায় অভিযুক্ত প্রবাল সরকারকে গ্রেপ্তার করল রায়গঞ্জ (Raiganj) থানার পুলিশ। অভিযুক্ত মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধার বাসিন্দা। আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতের কাছ থেকে সুপ্রিয়াদেবীর ও তাঁর ছেলের খোয়া যাওয়া দুটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর দুপুরে নিজের বাড়িতে সুপ্রিয়া দত্ত (৪১)-র গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়। সেইসময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ছেলে মায়ের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান। খুনের ঘটনায় নাম উঠে এসেছিল প্রবাল সরকারের। সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা যায়। ফালাকাটা থানার আইসি সুমিত তালুকদার জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এদিন ফালাকাটার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের জেরে গৃহবধূকে খুন করা হতে পারে, তদন্তে এমনটাই উঠে আসে। ফালাকাটা থানার পুলিশ এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে হোটেল থেকে প্রবালকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রায়গঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
এদিন মৃত গৃহবধূর ছেলে অনিক দত্তের কথায়, দেড় থেকে দু বছর আগে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। তার স্ত্রী ও একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ধৃতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন মৃত গৃহবধূর ছেলে। স্ত্রীর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার স্বামী দেবাশীষ দত্ত। ছয় দিনের মধ্যেই ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রীর হত্যাকান্ডের রহস্য ফাঁস করল পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজে শুক্রবার বিকেলে রায়গঞ্জ শহরের রবীন্দ্র পল্লির বাড়িতে পিঠে ব্যাগ নিয়ে যে ব্যক্তিকে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল, সেই ব্যক্তি সুপ্রিয়া দত্তর পরিচিত। ছেলে অনিকও জানিয়েছে, সে ওই যুবককে আগে দেখেছে।
পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের বয়ান অনুযায়ী, জলপাইগুড়ির কংগ্রেসপাড়ায় সুপ্রিয়াদেবীর বাবার বাড়ি। তাঁর সঙ্গে বছর খানেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা এলাকার এক যুবকের বন্ধুত্ব হয়। ওই পরিচিত যুবকই শুক্রবার রায়গঞ্জে তাঁদের বাড়িতে এসেছিল। তবে কি কারণে ওই যুবক সুপ্রিয়াদেবীকে এত নৃশংস ভাবে খুন করল, তা নিয়ে ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। এদিন রায়গঞ্জ পুলিশ সুপার সানা আখতার বলেন, “বধূ খুনে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়ার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।”
বস্তুত, শুক্রবার রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লিতে খুন হন গৃহবধু সুপ্রিয়া দত্ত (৪০)। ছেলে অনিক বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখে, শোওয়ার ঘরের বিছানায় পড়ে রয়েছে মায়ের গলা কাটা নিথর দেহ। সুপ্রিয়াদেবীর স্বামী দেবাশিস দত্ত জেলা পরিষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। রাতেই দেবাশিসবাবুর দায়ের করা খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। একে একে তথ্য প্রমাণ আসতে শুরু করে তদন্তকারীদের হাতে। প্রথমেই রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এক ব্যক্তিকে বাড়িতে ঢুকতে ও বের হতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তিকে চেনেন না বলে দাবি করেন দেবাশিসবাবু। পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা জানান ওই ব্যক্তি সুপ্রিয়াদেবীর পরিচিত। সেই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা প্রকৃত খুনীর খোঁজ শুরু করেন। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, বাড়ির লোক ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই কোচবিহারের ওই যুবকের বিষয় জানা যায়। সেই যে শুক্রবার ওই বাড়িতে এসেছিল, সেটিও সিসি টিভি দেখে তাঁরাই নিশ্চিত করেন। বিষয়টি স্পষ্ট হতেই আততায়ীর খোঁজে উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলায় তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু ততক্ষণে আস্তানা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছিল আততায়ী।
এদিকে মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই কার্যত বিধ্বস্ত একমাত্র পুত্র অনিক। একাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে কড়া শাসনের মধ্যে রেখেছিলেন সুপ্রিয়াদেবী বলে জানা গিয়েছে। স্বামী দেবাশিস দত্ত দিশেহারা। স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয় তাঁর কোনওদিনও কৌতূহল ছিল না। কিন্তু এমন ঘটনা যে কোনওদিন ঘটতে পারে, তা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি। কার্যত ভেঙে পড়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন : বুনিয়াদপুরে পথ দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু